পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, নবম সংখ্যা । এখনও মশারি আর একটা ড়েসিং টেবিল কিমতে বাকি এরি মধ্যেই তো দেড়শে টাকা ধার হয়ে গ্যাছে, কি করি ?” হেমেন্দ্র বিছানায় পড়িয়া কুঞ্চিত ক্রর মধ্য হইতে অপরিচ্ছন্ন দেওয়াল ও ছাদ পর্য্যবেক্ষণ কবিয়া অস্বস্তি অনুভব করিতেছিল । যোগেশেব অভিযোগ শুনিয়া তাহাব অপ্রসন্ন চিত্ত আরো অপ্রসন্ন হষ্টয়া উঠিল, অধীবভাবে মাথা নাড়িয়া কহিয়া উঠিল “নাওনা শ-পাচেক টাকা কারু কাছে ধtধ কবে । আমাব কি কোথাও তালুক মুলুক আছে!” “তষ্টিতে, শুধু হাতে এথানে যে কেউ ধার দিতে রাজি হয় না, বলে সত্য জমিদার হলে কি ঐ বাড়িতে থাকে ! এ আবার ফরাসীর মুলুক, ওরা ভয় পায় যদি এর পব কিছু গোল হয়। আমারও তো জানো অদ্য ভক্ষধনু গুণ!” ছেমেন্দ্র চুপ করিয়া রহিল, লে কি পরামর্শ দিবে ? তাহাব নিকট তো আর একটি কপর্দক ও নাই ! সে কি হাতে কিছু রাথিত, যাঙ্গ পাইত তাঙ্গতেই তাঙ্গাব খরচ পত্রে কুলাইয়া উঠিত ন—তবে এখন কি উপায় ? কি ভয়ানক ! এমনি ভয়ঙ্কর স্থান এই সংসারটা যে এক মুহূৰ্ত্ত মাত্র তাহার মধ্যে বাস করিতেও অর্থের দরকাব ! একটা দিন পর্য্যন্ত কেহ কাহারও পাওনা মাপ করিবে না? বেশ, তবে সেইবা কেন তাহার প্রাপ্য ছাড়িয়া দিবে ? সেইবা কেন এ অপমান এ কষ্টের প্রতিশোধ লইবে না ? কেন লইবে না, নিশ্চয় নিশ্চয় লইবে ! প্রতারণা কারিণী মায়াবিনীর কোন শাস্তি তাহার কৃতকৰ্ম্মের উপযুক্ত হইতে পারে? সে কোন শাস্তি ? হেমেন্দ্রকে নীরব দেখিয়া যোগেশ বলিল পোষ্যপুত্র। ፃዌU “এক কাজ করে না কেন ;–তোমার শ্বশুরকে লেখ না কেন কিছু টাকা পাঠাতে ?” গভীর ঘৃণার সহিত তীব্রম্বরে হেমেন্দ্র বাধা দিল,“চুপ করে ও নাম আমার কাছে করোনা। এই নাও ঘড়িটা ও চেনটা রেখে কোথাও থেকে টাকা আনে । জানো তে ওটা বড় কম দামী জিনিষ নয়।” রাত্রে সুন্দর জ্যোৎস্না ফুটিয়াছিল। আকাশ একেবারে মেঘশৃঙ্গ। চাদের আলোকে আকাশভরা নক্ষত্র দীপ্তিচীন দেখাইতেছে । হেমেন্দ্রের শয়ন গৃহের খোলা জানালার মধ্য দিয়া গৃহতলে জ্যোৎস্নালোক প্রবেশ করিয়াছিল, অল্প অল্প বাতাস গৃহসন্মুখস্থ বশ বনের পাত কঁপাইয়া, ঘরের মধ্যে মশারী ও আনলার কাপড় জুলাইয়া ফিরিতেছিল । যোগেশ শাস্তির সম্মুখে আসিয়া দাড়াইয়৷ ডাকিল “বৌদিদি !” ধ্যানমুগ্ধার মত শান্তি নীরবে জানলার নিকট বসিয়াছিল, চমকিয়া মুখ ফিরাইয়াই প্রথমে মাথার কাপড় টানিতে যাইতেছিল ; যোগেশের অনুযোগে নিরুত্ত হইয় তাহা যথাস্থানে স্থাপন করিল। যোগেশ বিস্ফারিত নেত্রে তাহার জ্যোৎস্ব বিধৌত মুখের পানে চাহিয়া রহিল, সে তাহাকে কি বলিতে আসিয়াছিল বোধ হয় তাহা স্মরণ ও হইতেছিল না । প্রত্যাশিতনেত্রে শাস্তিও তাছার মুখের পানে চাহিয়া দেখিল, তাহাকে চাহিয়া থাকিতে দেখিয়া আপন! আপনি তাহার চোখ নীচু হইয়া আসিল, আবার ক্ষণপরে দৃষ্টি উঠাইয়া দেখিল তখনও সে তেমনি করিয়া চাহিয়া আছে, ঈষৎ অস্বস্তি অনুভব করিয়া সে একটু চঞ্চল হইয়া উঠিয়া দাড়াইল ; যোগেশ তাহার নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত বাহিরের লোক মাত্র ।