পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

● ●8 এই সত্যে ইহারই ভিতর আমার যে একটা বিশেষত্ব আছে, এই সাম্যের ভিতরই যে একটা চিরন্তন বৈষম্য ফুটিয়া উঠিতেছে, ইহাকে নষ্ট করে না । সেইরূপ আমার মনের গঠনে এবং চিন্তার প্রণালীতেও এমন কিছু অাছে, যাতে আমার চিন্তাকে, আমার বিচারকে, জীবনের জটিল সমস্ত আমি যেভাবে ভেদ করিতে যাই, তাহাকে, অপর লোকের চিন্তা, অপর লোকের বিচার, অপর লোকের বিশ্ব সমস্তার মীমাংস হইতে পৃথক করিয়া রাখে। আমাদের চিন্তা যখন এক হয়, তখনে সে চিন্তার অভিব্যক্তি স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন হইয়া থাকে। একই সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়া, আমরা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আমাদের নিজেদের মত করিয়া সে সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করি ও অপরের নিকট প্রয়োজন মত তাহাকে প্রতিষ্ঠিত কবিবার চেষ্টা করিয়া থাকি। আমাদের কণ্ঠেব যেমন একটা সুর আছে, এ স্বর যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির স্বতন্ত্র ; একই কথা বলিতেছি, একই বর্ণ উচ্চারণ করিতেছি, উচ্চারণও সমভাবে সাধু হইতেছে, অথচ আমার মুর আমার, তোমার সুর তোমার, ইহা যেমন সত্য ; সেইরূপ আমাদের মনেরো একটা মুর আছে। আমাদের অভিজ্ঞতা এক, আমাদের মত এক, আমাদের বিশ্বাস এক, অtমাদের সিদ্ধান্ত এক,— এ সকলই হয়ত এক ; কিন্তু তথাপি এই একই অভিজ্ঞতা, একই মত, একই বিশ্বাস একই সিদ্ধান্ত যখন আমি প্রতিষ্ঠিত করিতে যাই, তখন তার ভিতরে আমার মনের যে নিজস্ব মুরটুকু আছে, তাহাই বাজিয়া উঠে, আর তোমার মনের যে নিজস্ব डांब्रउँी । কাৰ্ত্তিক, ১৩১৭ স্বরটুকু আছে, তোমার চিস্তাতে, তোমার বিচারে, তোমার অভিব্যক্তিতে তাহাই বাজিয়া উঠে। এই মনের স্বরটার নামই ভাষা। আমাদের ভাষাতে, যেভাবে আমরা শব্দযোজনা করি, যেরূপে আমরা কথাবার্তা কহি, যে প্রণালীতে আমরা বিবিধ বিষয়ের বিচারআলোচনা করি, এককথায় আমাদের লেখার ধরণে, রচনার প্রণালীতে, সৰ্ব্বদাই আমাদের মনের এই সুরটি ফুটিয়া বাহির হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির রচনার গাথুনীর দ্বারা তার মনেরো গাঁথুনীর পরিচয় পাওয়া যায়। যার চিন্তা লঘু, তার ভাষাও লঘু হয়। যার চিন্তা সতেজ, শক্ত, যুক্তি পরম্পরার উপরে সর্বদা আপনার সিদ্ধাস্তকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চাহে, যার ভিতরকার মনের স্বভাব এরূপ, তার ভাষাতেও ইহা প্রকাশিত হইয় থাকে। আর এই ভাষাটুকু আমাদের প্রত্যেকেরই আলাহিদা । রচনার কোনো বিশেষত্ব নাই, এমন লোকও আছেন। তার যখন ষে বই পড়েন, তখন সেই লেখকের ভাষাই লেখেন ও বলেন। এরূপ তুলারাশি লোকের মনের বিশেষত্ব ফুটে নাই, ভাষারো বিশেষত্ব ফুটে নাই। র্তাদের মনেরো একটা বিশেষত্ব আছে, সত্য । কালক্রমে উপযুক্ত অনুশীলনে সে বিশেষত্বটুকু ফুটিয়া উঠিবে। আর তখন তাদের ভাষাও র্তাদের নিজস্ব বস্তু হইয়া দাড়াইবে । যাদের ভাষ গড়িয়া উঠিয়াছে, তাদের লেখাতে সৰ্ব্বদাই তাদের নিজত্ব বা ব্যক্তিত্বটুকু ফুটিয়া বাহির হয়। অনেক লোকের ছবির মাঝখানে পরিচিত বন্ধুর ছবি যেমন সহজেই চেনা যায়, অনেক লেখকের রচনার ভিতরেও সেইরূপ