পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, দশম সংখ্যা । চয়ন – জয়পুর। b"○○ জয়পুর। ( ফেলিসিয়া-শু্যালের ফরাসী হইতে ) ২৮২৯ জানুয়ারী ১৯• o জয়পুরের যে একটি চিত্তবিমোহন সাঙ্গীতিক সৌন্দর্য্য আছে তাহা আমি কিরূপে অষ্ঠের হৃদয়ঙ্গম করাইব ? এই নগরাটকে একটি রাগিণী বলিলেও হয় । এই রাগিণীর বাদীসুরটি গোলাপী । নগরের প্রাচীর গোলাপী । নগরেব দ্বারগুলি গোলাপী । রাজপথের সমস্ত বাড়ী গুলি গোলাপী । প্রসাদ গুলি গোলাপী । দেবালয়গুলি গোলাপী । উদ্যানে গোলাপ। স্বর্ণাভ গোলাপী আলোকে সমস্ত উদ্ভাসিত । রাস্তায় জীবন-উস্কমেব অসীম স্ফৰি ; স্থ শ্ৰী পুরুষেবা শ্মএল ; ইহাদেব কাপড় অতি উৎকৃষ্ট, উজ্জল, প্রায়ই গোলাপী রঙের । তরুণীগণ স্মিতমুখী। সুন্দব শিশু গুলি একেবারে নগ্নকায়। রাস্তার মাঝে, হাতী, উট, জেব্রা, মহিষ, ছাগল, গাধ, গরু। বাড়ীর ছাদে—বানর, পায়রা, মযুব, টিয়া, কাক । রাস্তায় বিবাহের বরযাত্রী চলিয়াছে –আগে আগে কোলাহলময় বাদ্যভাণ্ড, বাব বৎসর বয়স্ক বরেব হাসি মুখ । মহারাজীর একজন ভৃত্য, শিকলে-বাধা একটা নেকৃড়েকে লইয়া রাস্তায় ফিরাইতেছে। আমরা মহারাজীর এক জন মন্ত্রীর সহিত সাক্ষাং করিতে যাইতেছি। তিনি একটি গোলাপী রঙের বাড়ীতে থাকেন ; বাড়ীর গায়ে বড়বড় সাদা হাতী চিত্রিত। বৃদ্ধ মন্ত্রী দেখিতে স্বত্র, ইছার অপূৰ্ব্ব ধরণেব বড়-বড় চোখ । মন্ত্রী, তাহাব ছোট ছেলেদিগকে আমাদের সম্মুখে আনিলেন । তাহারা গোলাপী রঙেব কাশ্মীরী কাপড় পৰিয়াছে। জাফ্রানের ও পেস্তার মেঠাই, ছোটো-ছোটো কমললেবু, ছাড়ানো বেদান, এই সব তিনি আমাদের হাতে দিলেন... এখানকার সমস্ত পরিবেষ্টনট এরূপ অপূৰ্ব্ব, আমাদের অভ্যস্থ কৰ্ম্মক্ষেত্র হইতে এতটা তফাৎ যে, বাস্তবতার ভাবটা যেন মন হইতে শীঘ্রই তিবোহিত হয়। এই সুন্দর দৃগু দর্শনে সৰ্ব্ব প্রকার ভাবনা চিন্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া হৃদয় অসীম আনন্দে,—এক প্রকার লঘু ধরণের অহেতুক আনন্দে উৎফুল্ল হইয় উঠে । t এই গীতি-নাট্যের সাজসজ্জাব মধ্যে মামুষ যে বাধ্য হইয়া, বাস্তব-বোধে জীবনের কাজ কৰ্ম্ম করিয়া যাইতেছে-ইহ যেন সহজে হৃদয়ঙ্গম হয় না, একটু ভাবিয়া চিন্তিয়া স্থির কবিতে হয়। জয়পুরের আশপাশ দুর্ভিক্ষে উজাড় হইয়া গিয়াছে । এই স্বৰ্গপুরীর দ্বারদেশে, শত সহস্র হতভাগ্য ব্যক্তি অনাহারে মরিতেছে । জয়পুরের নিকটবৰ্ত্তী মাঠ ময়দানের উপর দিয়া যখন আমাদের গাড়ী চলিতেছিল, অনেকগুলা মৃতদেহ আমাদের পথের সন্মুখে পড়িয়াছিল। মৃত্যুই তাহাদিগকে ভবযন্ত্রণ হইতে উদ্ধার করিয়াছে। শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।