পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা। “তোমাকে ছেড়ে এসে অবধি কি চিতার আগুনে আমি পুড়চি তা বলতে পারবো না । সারাজীবন তেমনি পুড়তে হবে ; তোমার পায়ের তলায় আজ এক মুহুর্তের জন্য তার বিরাম হয়েছে,—দয়া করে, এই এক মুহূর্বের জন্যে আমাকে বঞ্চিত করোনা,—তুমি দেবতা, তোমার স্পর্শ আমাকে ভিক্ষা দাও!” সন্ন্যাসী কহিল, “আমি এখনি এ গ্রাম ত্যাগ করে চলে যাৰ—“ কমলা কহিল “তবে বিলম্ব কবোন— আমার ক্ষমা নেই, আমার অনন্ত নরক, অনন্ত দাঙ্গ, জানি,কিন্তু তোমার ঐ ছোট মেয়ে মন্দ, সেই তোমার একমাত্র স্মৃতি, যাকে বুকে করে তোমাব কথা মনে করে, প্রাণ জুড়োই,-- ত’কে তুমি বঁচা ও, তুমি মনে করলে, তুমি দয়া করলে সে নিশ্চয় ব{চবে । একমাসের মেয়ে,—তাকে কোলে করে আমি বেরিয়ে ছিলাম —” সন্ন্যাসী ব্যগ্রভাবে কহিল, "চুপ কর, চুপ কর, সে কাহিনী শুনলে, বাতাস নিশ্চল হবে, গাছপালা শিউরে উঠবে ” সন্ন্যাসীর পায়ে মাথা রাথিয়া কমলা কহিল, “ভবে থাক্ । কিন্তু তুমি চলো—তাকে বাচাও, দয়া করে, দয়া করে ।* যন্ত্রচালিতের মত সন্ন্যাসী কহিল, "চল" । げ মন্দার মাথার শিয়রে আসিয়া যখন সন্ন্যাসী বসিল, তখন মনার ঠাকুমা কহিলেন, "ঠাকুর, আমার প্রার্থন গুনে অবশেষে যে তুমি মন্দাকে দেখতে এসেছ, এতেই আমার মনে হচ্ছে, মন্দা নিশ্চয় বাচবে।” সন্ন্যাসী কহিল, “বাচবে বৈ কি-বাচবে । সন্ন্যাসী । 6t\(. ভেবেছিলাম আসবনা-কিন্তু মন্দাকে না দেখে থাকৃতে পারলাম ন!—* ঠাকুমা কহিলেন, “তার ওপর এই দয়া চিরকাল রেখো, ঠাকুর ।” সে কি অক্লান্ত সেবা । দিন এবং রাত্রির মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়া গেল—বিনিদ্র, নিরলস ভাবে সন্ন্যাসী সাতদিন মন্দার মাথার শিয়রে কাটাইয়া দিল । যে রাত্রে মন্দাকে সে দেখিতে আসে,—সে রাত্রের কথা একটা স্বপ্ন-কাহিনীর মত, ঐ ছোট মেয়ে মন্দা, যে আজ ব্যাধির প্রকোপে সংজ্ঞাহীন, সে তারই, সে সেই ছোট এক মাসের মেয়ে, যে তার ক্রেীড়চু্যত হয়েছিল । তার ব্ৰণাঙ্কিত অধরে সন্ন্যাসী ধীরে ধীরে চুম্বন দান করে,—সেবার মধ্যে দিপারাত্রি প্রার্থনা কবে, “হে ঠাকুর মন্দাকে বঁাচাও, পতিতার, আশ্রয়হীন কলঙ্কিনীর সেই একটি মাত্র শীতল সাত্বন, একটিমাত্র স্মৃতি ! তাকে ফিরিয়ে দাও !” সাতদিনের পর যখন মন্দা রোগমুক্ত হইল, তথন সন্ন্যাসী বলিল, “এখন তবে যাই ।” ঠাকুম কহিলেন, “ঠাকুর আপনাকে কি বলব, কি দেবে, জানিনে ! আপনি দেবতা ।” সন্ন্যাসী কহিল,"আমাকে আর কিছু দিতে হবে না, শুধু মুক্তি দিন, আর আবার যদি কখনও ফিরি, মন্দাকে দেখতে দেবেন।” ঠাকুমা কহিলেন, “মনা ত ঠাকুর, আপনারই ! আপনি তার প্রাণ দিয়েছেন, সে আর আমাদের নয়। তাকে দেখতে ইচ্ছে কল্লেই দেখতে পাবেন-এ ত ছোট কথা !” বিদায়ের সময় মন্দাকে বুকের মধ্যে লইয়৷ সন্ন্যাসী বার-বার আদর করিতে লাগিল—