পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, নবম সংখ্যা যে বিপদের সম্ভাবনা এক সময় আমি অলীক বলিয়া তুমুল তর্কের মুখে উড়াইয়া দিতে চাহিয়া ছিলাম, আজ কি না তাহারই প্রতীক্ষায় উত্ত্বেলিত বক্ষে পথ চাহিয়া ভয়ে সারা হইতেছি। অনেক সময় হাসিবার চেষ্টা করিয়া অকারণে ভাবিয়াছি, আমি প্রকৃতিস্থ কি না ! সঙ্গ ও সংস্কারের কি অদ্ভুত মাদকতা-শক্তি,—আমি এখন একজন ঘোর অদৃষ্টবাদী। আমার অন্তরের এই আশ্চৰ্য্য পরিবর্তন এমন ধীরে ধীরে আমার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে ঘটয়াছিল, যে, আমি অনেক সময় অবাক হইয়া ভাবিয়া থাকি, —যে কিরূপে, কখন, ইহা ঘটিল ? চিন্তা যেখানে পথ পায় না, যুক্তি সেখানে পথ গড়িয়া লয়। আমরা ভাই-বোনে যখন কোন সুমীমাংসায় উপনীত হইতে পারিলাম না, তখন স্থির করিলাম, চুপ করিয়া ৬ই অক্টোবর পর্য্যন্ত আমাদের বন্ধুদের নিজ মুখ হইতে সব কথা শুনিবার জন্ত অপেক্ষা করাই এখানে সদযুক্তি। এখন মধ্যকার এই সুদীর্ঘ দিন কয়টাকে কাটাইয়া দেওয়া যায় কিরূপে ? কিন্তু এ বিষয়েও বড় অধিক চিন্তা করিতে হয় নাই। দৈব সহসা এমন একটা অচিস্তিত ঘটনা আনিয়া আমাদের সারা চিত্তকে তাহারই করতলে দ্যস্ত করিয়া দিল, যে অপর চিন্তার আর বড় অবসরও রহিল না । - একাদশ পরিচ্ছেদ ৩রা অক্টোবরের প্রভাত বেশ মনোহর মুৰ্বিতেই দেখা দিয়াছিল। সুৰ্য্যের রশ্মিতে তীক্ষ্ণতা নাই! লঘু শুভ্র মেঘখণ্ডগুলি প্রাতঃ সোধ-রহস্ত স্বৰ্য্যের কিরণে রঞ্জিত হইয়া বিহঙ্গের মতই ডান মেলিয়া আকাশের-গায়ে ভাসিয়া চলিয়াছে। বাতাসে শীতলতা ছিল, শৈত্য ছিল না । কাননে সদ্য জাগরিত পার্থীর কল-কুজনে চতুৰ্দ্দিকে মধুরতার ফোয়ার ছুটিতেছিল। আমরা মনের অবস্থা লইয়া জড় প্রকৃতিকে বিচার করি, তাই আমার মনে হইল, সেদিনকার প্রভাত বুঝি কোন আগত শুভ ঘটনারই আভাষ বহন করিয়া অতিথির বেশে দেখা দিয়াছে | প্রকৃতির এই মধুর ভাব অধিকক্ষণ কিন্তু স্থায়ী হইল না। যেমন বেলা বাড়িতে লাগিল, স্বৰ্য্যের তেজও সেই সঙ্গে বৰ্দ্ধিত হইতেছিল। নাতিশীতোষ্ণ বাতাস, যাহা কিছু পূৰ্ব্বে দেহ, মনের ক্লাস্তি হরণ করিয়া হৃদয়ে অভূতপূৰ্ব্ব আনন্দ প্রদান করিতেছিল, তাহাই একেবারো বন্ধ হইয়া গিয়া চারিদিকে একটা অসন্থ গুমটের স্বষ্টি করিয়া তুলিল। যদিও শীত ঋতু তখন মধ্য পথে অগ্রসর হইয়া আসিয়াছে, তথাপি সেদিনকার মেঘহীন সুৰ্য্যোত্তাপে অসহ অনলবর্ষ জ্বালা বর্ষিত হইতেছিল। এবং চ্যানেলের অপর প্রান্তে দুর আয়লণ্ডের ধূসর পর্বতগুলির উপর কেহ যেন একখানা তরল কুয়াশার আচ্ছাদন বিছাইয়া দিয়াছিল । তরঙ্গের উপর মৎস্ত-লোলুপ পক্ষীর দল ক্রীড়া না করিয়া উড়িয়া গিয়াছে। সৈকত ভূমে টিটিভরাও ক্রীড়া ছাড়িয়া লুকায়িত। সমুদ্রের সফেন উৰ্দ্ধোৎক্ষিপ্ত তরঙ্গগুলা চক্রাকারে ঘুরিতে ঘুরিতে গভীর গর্জনে বেলাভূমে আছাড়িয়া পড়িতেছিল, তাহার সেই গম্ভীর, গগন-পূরিত ধীর গর্জন-ধ্বনি, কর্ণে