পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૭. মালা দিয়া জলশায়ী অনন্তের পূজা সমাধা কবিয়াছেন । ইতিমধ্যেই কোথাও কোথাও ধনকট আরম্ভ হইয়াছে, রাশি রাশি খড়ের তাটি বাধিয়া স্ত,পাকারে একপ্রান্তে রক্ষিত হইয়াছে, বলদ গাড়িতে কৃষকপরিবার শস্ত বোঝাই দিতে ব্যস্ত। হিমসঙ্কুচিত বনবিহঙ্গ পক্ষ বিস্তৃত করিয়া দূব পরপার হইতে নীড় লক্ষ্যে ফিরিতেছিল । কচিৎ দু-একটা পক্ষী স্থির বাতাসে পক্ষ ঢালিয়া ইচ্ছামুখে কোন দিগন্তের শেষে ভাসিয়া বেড়াইতেছিল। মনীশ এই শান্ত সন্ধ্যায় মাঠের আঁকা বাকী পথ ধরিয়া বট অশ্বর্থের ছায়ানিবিড় তরুপথে ঘাটের কাছ অবধি আসিয়া পড়িল । ওম্য নারীগণ তখন যে যাহার কলস ভরিয়া ঘবে ফিবিয়াছেন । কৃষাণ তখন শ্রমসাঙ্গ করিয়া কাস্তে হাতে রামপ্রসাদী এক তলায় “মন রে কৃষি কাজ জানো না” গাছিয়া ঘরের পানে চলিয়াছে, আকাশের কোলছাড়া পাখীগুলি বহুবিস্তৃতশাখ, প্রাসাদ তুল্য মহাবৃক্ষে আশ্রয় গ্রহণ কবিতে করিতে দিবসের শেষ আলাপ সাঙ্গ করিতেছিল। ভ্রমণক্লাস্ত মনীশ একটা গাছের গুড়ির উপর বসিয়া পড়িল । এবার এখানে আসিয়া মনীশ আবার তাহার আরব্ধ কৰ্ম্মভার গ্রহণ করিয়াছে। শ্রপতি বাবু দরিদ্র সস্তানগণের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করিয়া এতদিন যে কাৰ্য্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়া আসিতেছেন সেখানে সে বৃথা ক্ষমতা ব্যয় করিতে যায় নাই। পায়রাডাঙ্গায় এইরূপ একটি দরিদ্র পাঠশালা স্থাপনার্থে সে সেইখানে প্রতিদিন আসা যাওয়া করিতেছিল। অপরাহ্লে কৰ্ম্মপরায়ণ ভারতী কীৰ্ত্তিক, ১৩২০ চাষীদের মাঝখানে তাহীর উদয় যেন জ্যোতিষ্মান মঙ্গল গ্রহের অভু্যদয় পরিকল্পিত হইত। সাগ্রহে মুখ শ্রমজীবীগণ দাদা ঠাকুরের মুখের অমৃতবাণী বিদেশী শ্রমজীবীগণের বিস্ময়কর ত্যাগশীলতা, স্বদেশপ্রেম স্বজাতিপ্রতি, ধৰ্ম্মপ্রাণত শ্রবণ করিত। গৌরবে তখন তাহদের জ্যোতিঃ-হীন নেত্র উজ্জ্বল হইয়া উঠিত, বৃক্ষতলে সুষুপ্ত মানবাত্মা জাগিয়া উঠিয় তাহদের বাহিক ব্যবধান দূর করিয়া দিত, কেহ দন্তে দন্তে চাপিয়া, কেহ সহস্তে অকস্মাৎ কহিয়া উঠিত “আমরাও তা হলে ভদর লোকদের মতন ভাল ভাল কাজ করতে পারি হ্যা দাদা ঠাকুর ?” দাদা ঠাকুরও উৎফুল্ল নেত্র স্নেহে করুণায় ঈষদার্ড করিয়া ভারী গলায় উত্তর দিতেন, “স্বভাবে যে বড় সেই প্রকৃত বড় কেন পারবে না তোমরা ?” অশিক্ষিত যুবা বৃদ্ধ বালক মুগ্ধ হইয়া ভাবিত “দাদা ঠাকুর দেবতা !” আজও মনীশ সেই প্রাত্যহিক কাৰ্য্যব্যপদেশে এখানে আসিয়াছিল, কৰ্ম্মশেষে বিশ্রাম গ্রহণ করিয়াছে । দেখিতে দেখিতে বিশ্বজগতের দ্বার রাত্রির অন্ধকারে রুদ্ধ হইয়া আসিল, সন্ধ্যাতেই বক্র রেখায় চাদ উঠিয়া অভয় হাস্তে বাতায়ন মুক্ত করিয়া দিলেন, আবার ভীত জগৎ প্রসন্নচিত্তে হাসিয়া উঠিল । মনীশ গৃহে প্রতিগমনার্থে উঠিয়া দাড়াইল । তাহার মনে এ একটু খানি কালির রেখা কেন ? এই সুন্দর, সানন্দ ও বিশাল জগতের মধ্যে সে কেন আর তাহার সকল দীনতা সেই এক অবিচ্ছেদের মধ্যে সমর্পণ করিতে পারে না ! কেন নিজের অক্ষুব্ধ প্লেমের সুধা