পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓዓ< করে নাই ! বৃথা ভয়, মিথ্যা এ ভাবনা । সে এ জগতের অনেক উদ্ধে, মানবচিত্তের ক্ষুদ্র মুখ কল্পনা আশা নিরাশার দ্বন্দ যুদ্ধের সহিত তাহাব কোন সম্বন্ধ নাই । সে প্রেমিক নহে, নিজেই সে প্রেম! নিম্পন্দলোচনে সে মনীশের হাস্তে{জ্জল মুখের অপূৰ্ব্ব সৌন্দৰ্য্য শ্রদ্ধাসংযত হৃদয়ে চাহিয়া দেখিতে লাগিল । মনে মনে মাথা নত করিয়া তাহকে প্রণাম করিল, পুলকিত অঙ্গে তাহাকে আলিঙ্গন কল্পনা করিয়া কণ্টকিত দেহ হইল, এ মহাযোগী মহাদেব আজও ধ্যানসীন। মনীশ উঠিয়া হাসিমুখে সেলফের উপব হইতে একথান অতি পরিপাটি আবরণ-মণ্ডিত ক্ষুদ্র পুস্তিক লইয়া আসিল, সোনার জলেব লতাযুক্ত সুন্দর ছাদের টানা অক্ষরে বড় বড় করিয়া ইহার উপবে খোদা “ক্ষণিকের দেখা” মলটের নীচের পাতার উপরে কালীর অক্ষরে লেথ “চিরস্নেহাস্পদ বন্ধু মনীশকে উপহার। অকৃত্রিম বন্ধু শচীকান্ত ।” মনীশ পাতা উলটিয়া শচীব চক্ষের সম্মুখে ধরিল “এলেখাটা চিনতে পারো ?” একবার চোখ বুলাইতেই শচীর বুকটা ধড়াস করিয়া উঠিল “আমার তো মনে হচ্চে না আমি তোমায় এ রকম বই পাঠিয়েছি, কিন্তু লেখা তো আমার হাতেরই ?” “কেমন করে হলো বলে তো ?” মনীশ তাহার মুখের দিকে চাহিয়া হাসিতে লাগিল । “আমি নিজে লিখেছি, জাল করা বড় শক্ত, তোমার চিঠিগুলা দেখে এক একটি অক্ষর কত ধরে ধরে লিখেছি, কিন্তু যখন শেষ হলে দেখলাম ঠিক তোমার লেখার সঙ্গে মিলে এবং ভারতী কাৰ্ত্তিক, ১৩২৪ গ্যাছে শচীন, তখন মনে বড় আনন্দ হলে, বোধ হ’লে যেন তুমিই এ লেখা আমায় পাঠিয়েছ, আমি রোজ একবার করে লেথাটি দেখি, আর”— “মনীশ !” আহততন্ত্রী বীণার আকস্মিক ক্ৰন্দনমুচ্ছনার স্থায় অকস্মাৎ শচীকান্ত ব্যথাকাতর চিত্তে কহিল উঠিল “মনীশ ! তুমি তোমার এই পাষণ্ড বন্ধুর কথা এত ভাবে, এত খানি ভালবাসে, তাকে জানো না কত হীন, কত নীচ সে—” কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া বিলাপ ধ্বনির মত আকুল স্বরে পুনরায় সে আরম্ভ করিল “শোন মনীশ, তোমার চির সুহৃদের অধঃপতন কাহিনী তবে তুমি শোন, আর আমি চাপতে পারি না, যা হবে হোক, সব বলি শোন। জেনে যদি ঘৃণা করতে হয় তাও করে। তবু এ লুকোচুরি”—বিস্ময়ে মনীশ এ পর্য্যন্ত একটি বাক্য উচ্চারণেও সক্ষম হয় নাই, এতক্ষণে আকস্মিক বিস্ময়ের বেগ ঈষৎ প্রশমিত হইয়া আসিলে সে তৎক্ষণাৎ নিজের আসন তাহার আসনের আরও কাছে টানিয়া আনিয়া তাহার বাহুমুলে সাস্তুনাহস্ত স্থাপন করিল “শাস্ত হও ভাই, আমি কোন কথা শুনতে চাইনে” “না মণি ! বাধা দি ও না, আমায় বলতে দাও । শোন তুমি কার উপরে এত বড় বিশ্বাস, এ অমর প্রেম স্থাপন করেছ সে তোমার-—” মনীশ ব্যগ্র করে তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল, তড়িৎ বেগে উঠিয়া পড়িয়া দ্রুত অথচ পূর্ণ বিশ্বস্ত স্বরে সবেগে মাথা নাড়িয়া বলিল “একটি কথাও না । আমি তোমার এ পাগলামীর ও শ্রয় দিতে পারবে না শচি ;