পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা । ভবকান্ত উদাস দৃষ্টিতে তাহীদের পানে চাহিয়াছিল । তাছার মনে হইতেছিল, জগতে সুখ যদি কোথাও থাকে ত, ঐ বীরেন্দ্রবাবুর বাড়ীর ছাদেই তাহা আছে । আর, এই বীরেন্দ্রবাবুর সহিত যাহাদিগের সম্পর্ক আছে, এ জগতে তাহাদেরি জীবনধারণ শুধু সার্থক ! এই ছোট মেয়েগুলি অসঙ্কোচে যাহাঁদের সহিত আলাপ-পরিহাস করে, যাহাদিগকে দেখিলে আনন্দ্বে-অভিমানে মাতিয়া উঠে, ধন্ত, শুধু তাহারাই ! হায়, সে তাহাদিগের কেহই নহে ! তাহার অমুখ হইলে বীরেন্দ্র বাবুর বাটীর দাসদাসীরাও তাহার সন্ধান লইবে না, তাহার সুথে বীরেন্দ্র বাবুর দরোয়ান অবধি এতটুকু আনন্দ জানাইতে আসিবে না, ছেলেমেয়েগুলি ত নহেই ! সে যদি আজ মৃলিগায়ের ভবকাস্ত নী হইয়া, বীরেন্দ্র বাবুর বাড়ীর এই ছেলেমেয়েদের গাড়ী টানিবার ভৃত্য হইত, তাহা হইলেও আজ তাহার কত মুখ ছিল । ভবকান্ত ধীরে ধীরে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কত কথাই ভাবিত্তে লাগিল । এই হাস্তময়ী, সজ্জিত, সুবেশা, চম্পকরবণী ছোট মেয়েগুলির পাশে দাড়াইতে পারে, সমগ্র মুলিঙ্গ খুজিলে, এমন একটি মেয়েও মেলে কি না সন্দেহ ! মুরজাহান, বুঝি, শৈশবে ঠিক এমনি ছিল ! ইহার মধ্যে, কেহ যদি বেচারা ভবকাস্তের হৃদয়ভাগিনী হয়—! বাতাসে, ভবকাস্তের দীর্ঘনিশ্বাস ভাসিয়া গেল ! সে রাত্রে বিছানায় শয়ন করিয়া, একটা কথা কেবলি ভবকাস্তুের মনে হইতেছিলএত বয়স হইতে চলিল, তবু ত সে কোনদিন কাহারে প্রেমে পড়ে নাই ! তার অদৃষ্ট নিতান্তই অ প্রসন্ন ! তার বন্ধু যোগেশ্বর প্রেমে পড়িয়াছিল,সত্যরও দুইবার লভ, হইয়াছিল, আর সে এমন কি দোষ করিয়াছে যে, প্রেমের নিরাশ যাতনাটুকু ভোগ করিবার অবকাশও তাহাকে স্বাও নাই, ভগবান ! আজ সে ভাখিতেছিল, প্রেমে পড়িবার পক্ষে যোগ্য পাত্রীই বা তার মিলে কোথায় ! মরীচিকা । -- ԵՑ ঐ বীরেন্দ্র বাবুর বাড়ী—অtহ, তা যদি সম্ভব হইত ! তাহ হইলে, জগতে তার আর কোন অভাবই থাকি ত না ! ভবকাস্ত না হইয়া, সে যদি আজ কোন উপন্যাসের নায়ক হইত, তাহা হইলে ত স্থঃথই ছিল না। দম্য-হস্তে নিগৃহীত হইতে কি সে পশ্চাৎপদ, যদি অনঙ্গমঞ্জরীর মত, তার উদ্ধার-কত্রী মিলিবার সম্ভাবনা থাকে ! শেষ রাত্রে, ঘুম ভাঙিলে, ভবকান্ত স্থির করিল, কলিকাতায় কাহারে সহিত তাহার তেমন আলাপ নাই, দেশে ফিরিয়া প্রেমে পড়িবার জন্ত সে একবার চেষ্টা করিয়া দেখিবে। লক্ষ্মী উদ্যোগী পুরুষসিংহেরই আশ্রয় গ্রহণ করেন । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ । অস্কুরোদগম। মুলিগায়ের বাটির বাহিরের রোয়াকে ভবকান্ত বসিয়াছিল । সম্মুখের বাগানে, পাড়ার বালিকার ফুল তুলিতেছিল। ইহাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ শৈবলিনী দেখিতে-শুনিতে মন্দ নহে ! নামটিও শৈবলিনী ! প্রেমের পক্ষে উপযুক্ত পাত্রী বটে ! তবে তাহার শাণিত রসন দেশে এমন প্রসিদ্ধি বিস্তার করিয়াছিল যে, ভবিষ্যতে সে কলহ-বিদ্যায় অপূৰ্ব্ব প্রতিভার পরিচয় দিতে পারিবে বলিয়৷ সকলের স্থির বিশ্বাস জন্মিয়াছিল । আর শুধুই কি রসন ! কিল-চড় প্রভূতি প্রহারবর্ষণেও সে আশ্চৰ্য্য শক্তির পরিচয় দিত । এক কথায়, ছোট গ্রামখানিতে, সে বগীর হাঙ্গামার তুল্যই ভয়াবহ হইয়া উঠিয়াছিল । পাড়ার ছেলেমেয়ের তাহাকে, সম্রাজ্ঞীর আসনে, বরণ করিয়া সশঙ্কচিত্তে তাহার আজ্ঞা-পালনে, সৰ্ব্বদা উদগ্রীব থাকিত । তার থর বচনের আশঙ্কায়, কলিকাতা-প্রত্যাগত ভবকান্ত একদিনে প্রেমাভিব্যক্তির সাহস পায় নাই । আজ, তাহাকে দেখিয়া, ক্ষোভে, বেচার ভবকান্তের অন্তদাহ উপস্থিত হইয়াছিল ! হায়, প্রতাপ ! হায়, শৈবলিনী, শৈ– !