পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩২১.djvu/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*** ভারতী g যত্নপরতা গুণ জননীর চরিত্র গত হইয়া যায়। এই রূপে ধৈর্য্য, সহানুভূতি ও যত্নপরতা এই গুণত্রয় মানবে পরিস্ফুট হইয়াছে। ' এই প্রকারে সস্তান পালনের সময় হয়ত কতিপয় জননীর ক্রোড়স্থিত শিশুর সম্মুখে একটা আকস্মিক বিপদ, আহারাভাব, পীড়া ইত্যাদি—উপস্থিত হইল। হয়ত এই নূতন বিপদ হইতে সন্তান রক্ষণ সেই জননীর ক্ষমতা বা ধৈৰ্য্যের সীমাবহিভূত, হয়ত সেই জননী আজ পর্যন্ত সন্তান রক্ষার জন্ত যাহা করিয়াছে, তাহার অধিক আর সে কিছু কবিতে পারে না। এরূপ স্থলে ঐ নিঃসহায় শিশু একাকী বিপদের সন্মুখীন হইতে অসমর্থ হওয়ায় প্রাণত্যাগ করিতে • বাধ্য হইল এবং ঐ অনুপযুক্ত জননীর বংশস্বত্র এই স্থানে ছিন্ন হইয়া পড়িল । এইখানে সন্তানের মৃত্যুতে জননীরও মৃত্যু ৷ পক্ষাস্তরে হয়ত অপর এক জননী অনুরূপ অবস্থায় তাহার আত্মদেহ পৰ্য্যন্ত উৎসর্গীকৃত করিয়া সন্তানকে রক্ষা করিল সেই জন্ত এই উপযুক্ত জননীর বংশস্বত্র অচ্ছিন্ন রহিল। এই স্থানে আত্মত্যাগ জগুতে প্রবেশ করিয়া মনুষ্য চরিত্রে রোপিত হইল। এইরূপে গ্ৰাচীন কাল হইতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাহায্যে অমুপযুক্ত। জননী জগৎ হইতে বিলুপ্ত হইতেছে এবং যোগ্যতর তাহার স্থান অধিকার করতেছে। অর্থাৎ অসম্পূর্ণ অপরিণত মাতৃত্ব দিনে দিনে সম্পূর্ণ এবং পরিণত হইতেছে। সেই আদিম অসভ্য মানবজননী હઃ তাহার শিশুটী জগতের কি মহৎ উপকার সাধিত করিয়াছে, উপরোক্ত উদাহরণ হইতে তাই অনুমান করা যায়। ৰুে দিন জাখিন, ১৩২১ সেই প্রথম নিঃসহায় দুৰ্ব্বল শিশুটার সাহায্যপ্রার্থনাসূচক প্রথম জাৰ্ত্তস্বর সেই প্রথম জননীর হৃদয়থানি কোমলতা এবং বাৎসর্গ প্রেমের . ধারায় পরিপ্লত করিয়াছিল, যে দিন সেই জননী একটা মুহূর্তেরও ক্লন্ত সেই শিশুটার দুৰ্ব্বলতা অথবা যন্ত্রণার প্রতি মনোযোগিনী হইয়াছিল, যে দিন সে সহানুভূতির কোন অননুভূত কাৰ্য্য অথবা ইঙ্গিতের দ্বারা মাতৃত্বের অনিৰ্ব্বচনীয় আভায টুকুর বিকাশ করিয়াছিল, সেই শুভলগ্নে প্রকৃতির শিল্পালয়ে এক নূতন শিল্পী এক নূতন কুর্য্যের জন্ত অবতীর্ণ হইয়াছিল। সেই আদি শৈশব যতই ক্ষণস্থায়ী হউক উহা প্রকৃতির উরসে যে অমৃত-নিবারের স্বজন করিয়াছে, তাহার ধার দীর্ঘতর বিস্তৃতির সহিত জগতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পারিবারিক কেজসমূহ পৰ্যন্ত পরিপ্লুত করিয়া সনাতন কাল প্রবহমান থাকিবে। ইহার কুলৰালী মানবগণ সেই অমৃত সলিল পান করিয়া অমরত্ব লাভ করিবে। একটী ক্ষুদ্র শিশুর ক্ষীণ অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর অকিঞ্চিৎকর বটে। কিন্তু ইহারই মধ্যে মানবজাতির ভবিষ্যৎ আশা বিরাজ করিতেছে। অক্ষম শৈশবাবস্থা ধতিরেকে আমাদের তীক্ষ বুদ্ধির প্রভাবে আমরা জীব জগতে সৰ্ব্বাপেক্ষা পরাক্রমশালী হইতে" পারিতাম, ত;হাতে কোম সন্দেহ নাই ! কিন্তু তাহ হইলে আন্মোৎসর্গ গুণ মানব চরিত্রে প্রবেশ লাভ করিত না, সামাজিকত জগতের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হইত না এবং তৎসঙ্গে নীতি ও ধৰ্ম্ম জগতে স্থান লাভ করিতে পারিত না । ঐউমাপতি বাজপেয়ী ।