পাতা:ভারতী ১২৮৪.djvu/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালীর আশা ও নৈরাশ্য। (ভারতী মা ১২৮৪ । o দের ভাষা শিক্ষা করিবে ! আমাদের দেশ হইতে জ্ঞান উপার্জন করিতে এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় দেশ বিদেশের লোকে পূর্ণ ৷ হইবে। বঙ্গের ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অলিখিত পৃষ্ঠায় এই সকল ঘটনা লিখিত হইবে, ইহা আমরা কল্পনা করিয়া লইতেছি সত্য, কিন্তু পাঠকেরা ইহা নিতান্ত অসম্ভব বোধ করিবেন না। প্রকাও সমুদ্রের কোন এক প্রান্তে কতকগুলি বালুকণা জমিয়া ক্ষুদ্র হইতে ক্ষুদ্র যে একটি তুষারাবৃত অনুৰ্ব্বর দ্বীপ প্রস্তুত | হইয়াছে, তাহার পূৰ্ব্ব-নিবাসীদের আকা শই অম্বর ছিল, পশুবৎ ব্যবহার ছিল, তরুকোটর বাসস্থান ছিল, নররক্ত-লোলুপ 1 ড্ৰইডগণ পুরোহিত ছিল, আজ তাহদেরই পুত্র পৌত্রগণ কোথা হইতে তাড়িয়া ফু ড়িয়া অসভ্যদের সভ্য করিবেন বলিয়া মহা গোলযোগ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন ইহাও ! যদি সম্ভব হইল, পতিত ইটালী ও গ্রীসও যদি পুনরায় জাগিয়া উঠিল, তবে যে নুতন . জাতি আজ নব উদ্যমে জলিয়া উঠিতেছে, নবজীবনে সঞ্জীবিত হইতেছে, নূতন মন্ত্রে দীক্ষিত হইতেছে, সে যে সভ্যতার চরম শিখরে না উঠিয়া বিশ্রাম করিবে না, তাহাতে অসম্ভব কি আছে ? ফভ্যতা পৃথিবীতে স্তরে স্তরে নিৰ্ম্মিত হইতে থাকে, একেবারে প্রচুর পরিমাণে সভ্যতা কখন পৃথিবীতে জন্মিতে পারে না। ক্রমই প্রকৃতির নিয়ম। সভ্যতার অধিষ্ঠাত্রী দেবী আসিয়া ভারতবর্ষ, গ্রীস ও ইটালীতে এক স্তর সভ্যতা নিৰ্ম্মাণু করিয়া গিয়াছেন। ঐ | বটে, কিন্তু এক স্তর সভ্যতা সেখানে এখনো অবশিষ্ট আছে। তিনি এখন ফ্রান্স জানি প্রভৃতি দেশে সভ্যতা নিৰ্ম্মাণ করিতেছেন এবং কিছুদিন পরে সেখানেও পদচিহ্ন রাখিয় আবার আমেরিক, রুসিয়া,জাপান মাড়াইয়া পুনরায় সেই প্রাচীন ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে উদিত হইবেন, তাহাতে অসম্ভব কিছুই নাই। সভ্যতার অধিষ্ঠাত্রী দেবী এইরূপে পৃথিবীময় পরিভ্রমণ করিতেছেন এবং স্তরে স্তরে পৃথিবীতে পূর্ণ সভ্যতা নিৰ্ম্মাণ করিতেছেন। ভবিষ্যতের একদিন আমরা কল্পনাচক্ষে দেখিতেছি, যে দিন আমাদের দীপ্যমান সভ্যতাঁর সম্মুখে ক্রমে ক্রমে ফ্রান্স, জন্মনি, ইংলণ্ডের সভ্যতা নিবিষ্ট। যাইবে, এ কথা অবিশ্বাস করবার নহে। অনন্ত কাল-সমুদ্রে কত ঘটনা-তরঙ্গ উঠিবে ও পড়িবে, আর আমাদের এই বঙ্গদেশ, এই লক্ষ লক্ষ অধিবাসী চিরকালই যে অধীনতার অন্ধকারে নিস্তাব ভাবে বিমাইবে, তাহ আমরা কল্পনা করিতেও পারি না। আমরা ইউরোপের সঞ্চিত সভ্যতা অল্পায়াসে অর্জন করিয়া লইতেছি, নিউটন যতখানি মাথা ঘুরাইয়া পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বুঝিয়াছিলেন, তাই বুঝিতে আমাদের মিউটনের একপঞ্চদশ-অংশও ভাবিতে হয় না । ইয়ুরোপ যখন বৃদ্ধ ও ক্লান্ত হইয়া যাইবেন, তখন তাহার সঞ্চিত সভ্যতা অর্জন করিয়া লইয়া আমরা আবার নব উদ্যমে অধিকতর সঞ্চয় করিতে আরম্ভ করিব। যে জাতি নব উদ্যমে উঠিতে আরম্ভ করে, তাহারাই lসকল দেশ হইতে দেবী চলির গিয়াছেন | ক্রমে সভ্যতার উচ্চশিখরে আরোহণ করে।