পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী বিবেকানন্দ। । b»a প্রভৃতি দুৰ্গম দেশে বাণিজ্যযাত্রার কৌতুহলপূর্ণ বিবরণ শুনিতেন। সে সময় সময় তঁহাকে সন্দেশ, মিঠাই আনিয়া খাইতে দিত। নরেন্দ্ৰও অকুষ্ঠিতচিত্তে উহা ভোজন করিতেন। অন্যান্য মক্কেল এই দৃশ্যে শিহরিয়া উঠিত। বিশ্বনাথবাবুও অনেকবার উহা প্ৰত্যক্ষ করিয়াছিলেন। কিন্তু আহারাদি সম্বন্ধে তিনি আচার-পালনে ততটা নিষ্ঠাবান ছিলেন না, সুতরাং পুত্ৰকে এ সম্বন্ধে কোনও কথা বলিতেন না। একবার মক্কেলাদিগকে বিদায় দিবার জন্য বিশ্বনাথবাবু সদর-দ্বার পর্যন্ত গিয়াছেন। নরেন্দ্রনাথ ইত্যবসরে বৈঠকখানা-ঘরে প্ৰবেশ করিয়া সারি সারি যতগুলি হুকা ছিল, তাহার প্রত্যেকটিতে মুখ দিয়া টানিতে আরম্ভ করিলেন। মুসলমানের হু কাটি একটু বেশীক্ষণ ধরিয়া টানিতে লাগিলেন, কারণ, তাহাতে মৃগনাভি-গন্ধযুক্ত তাম্রকুট-ধূমের অস্তিত্ব তখনও বিদ্যমান। নরেন্দ্ৰনাথ অকস্মাৎ কেন এমন করিলেন, প্রশ্ন হইতে পারে । বালক নরেন্দ্ৰনাথ জাতিভেদ-রহস্যের মৰ্ম্মভেদ করিতে পারেন নাই। একের সহিত অন্যের ভোজন নিষিদ্ধ কেন, ইহা কোনও মতেই তিনি নিজ বুদ্ধিবলে মীমাংসা করিতে পারেন নাই। জাতিভেদ না মানিলে কি ব্ৰহ্মাণ্ড ভাঙ্গিয়া চুরিয়া মাথার উপর পড়ে ? এইরূপ প্রশ্ন মনে রাখিয়াই তিনি বিভিন্ন জাতির জন্য-নির্দিষ্ট হুকায় মুখ দিয়া পরীক্ষা করিতেছিলেন। বালক দেখিলেন যে, তঁহার এই “অহিন্দু’ আচরণে নিখিল-বিশ্বের কোনও প্রান্তই খসিয়া পড়িল না। দুনিয়া যেমন চলিতেছিল, ঠিক তেমনই চলিতেছে। ঠিক এমনই সময় বিশ্বনাথবাবু ফিরিয়া আসিয়া পুত্রের কীৰ্ত্তি দেখিতে পাইলেন। তাহার প্রশ্নের উত্তরে নির্ভীক পুত্র অমানবন্ধনে বলিলেন, “দেখছি, জাত না মানলে কি হয় ?” পিতা সহাস্তে বলিয়া । উঠিলেন, “বন্টে রে দুষ্ট!” তার পর তিনি কক্ষান্তরে চলিয়া গেলেন।