পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

st 8 ভারত-প্রতিভা ধীরে ধীরে নরেন্দ্রনাথের অন্তরে পরিবর্তন আসিতেছিল। পাশ্চাত্য দর্শনশাস্ত্ৰ প্ৰভৃতি পাঠে তঁহার হৃদয়ে ভগবৎসম্বন্ধে যে ধারণা জন্মিয়াছিল, দক্ষিণেশ্বরের “পাগলা ব্ৰাহ্মণ” ক্রমে তাহার সমস্তই ওলট-পালট করিয়া দিতে লাগিলেন। অক্ষর-জ্ঞানশূন্য ব্ৰাহ্মণের মুখে ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে বড় বড় তত্ত্বকথা, জটিল সমস্যা-সমাধানের সরল যুক্তি শুনিয়া শুনিয়া নরেন্দ্রনাথ বিস্মিত হইতেছিলেন। ভগবানকে ইনি দর্শন করিয়াছেন, অন্যকেও দেখাইতে পারেন, গোড়া হিন্দুর মত আচার-ব্যবহার অথচ উদারতার তুলনা নাই। শ্ৰীশ্ৰীকালী-প্রতিমাকে গর্ভধারিণী জননীর ন্যায় জ্ঞান করেন, দিবানিশি তাহার সহিত কথা বলেন, আব্দার করেন, স্পর্শমাত্রেই যে কোন ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করিতে পারেন, অথচ অভিমান নাই, অহঙ্কার নাই, শিশুর ন্যায় সরল ও মধুর প্রকৃতি! জীবের দুঃখে কাতর, মানুষকে তত্ত্বকথা শুনাইতেই আনন্দ । নরেন্দ্রনাথ ক্রমেই মুগ্ধ হইতে লাগিলেন । s নরেন্দ্রনাথকে ঠাকুর এমনই ভালবাসিতেন যে, একদিন না গেলেই তিনি “নরেন নরেন” করিয়া অস্থির হইয়া উঠিতেন। নরেন্দ্রনাথের মধ্যে তিনি অনন্যসাধারণ শক্তির সঞ্চার দেখিতে পাইয়াছিলেন। অনেক সময় নরেন্দ্রনাথ তঁহার নিকট না গেলে, তিনি গাড়ী ভাড়া করিয়া তাহাকে স্বয়ং দেখিতে যাইতেন । নরেন্দ্রনাথ অত্যন্ত শ্ৰদ্ধা সহকারে পরমহংসদেবের কাৰ্যকলাপ ও কথা বুঝিবার চেষ্টা করিতেন। পরমহংসদেবের প্রত্যেক কাৰ্য্য, প্রত্যেক কথা, বিশ্লেষণ করিয়া দেখিতেন ; কাৰ্য্যে ও বাক্যে সামঞ্জস্য আছে কি না, তাহা বিশেষরূপে পরীক্ষা করিয়া দেখিতেন। অন্ধবিশ্বাসের বশবৰ্ত্তী হইয়া নরেন্দ্রনাথ পরমহংসদেবের আশ্রয় গ্রহণ করেন নাই। দীর্ঘকাল ধরিয়” ।