পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NV ভারত-প্ৰতিভা -কীৰ্ত্তব্যভ্ৰষ্ট হন নাই। মহর্ষি ভদ্রতা ও সৌজন্যের আদর্শ ছিলেন। একবার তাহার সংস্রবে। আসিলে, তঁাহাকে কেহ বিস্মৃত হইতে পারিত না । সংসার মায়ার লীলাভূমি, ঈশ্বরই অনন্ত সত্য, এই দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বলিয়াই তিনি সাংসারিক দুঃখ-কষ্টে-প্ৰিয়জন-বিয়োগ-শোকে বিচলিত হইতেন না । শৈশব হইতে ঈশ্বরচিন্তায় তন্ময় থাকিয়া সপ্তাশীতি-বর্ষ-বয়সে ১৯০৫ খৃষ্টাব্দের ৬ই মাঘ দেবেন্দ্ৰনাথ মরজগৎ ত্যাগ করিয়া পরম ব্রহ্মে লীন হইয়াছেন। মহাষি দেবেন্দ্রনাথের মত ত্যাগী, ভোগাসক্তিহীন, সত্যনিষ্ঠ, নিঃস্বার্থ পরোপকারী, শাস্ত্ৰজ্ঞ, ব্ৰহ্মোপাসক বৰ্ত্তমান যুগে বিরল। কোনও মহাপুরুষ বলিয়াছিলেন,-“মহর্ষি দেবেন্দ্ৰনাথ যেন পৌরাণিক যুগের জনক-সংসারী সন্ন্যাসী ।” সম্পদরাশির মধ্যে থাকিয়াও সম্পূর্ণ নিলিপ্ত সাধনমগ্ন। তঁহাকে সুবিস্তৃত জমিদারীর মালিক-কমলার প্রসাদপুষ্ট ধনবান বলিয়া লোকে জানিত না ; মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বলিয়াই ভক্তি নম্রহৃদয়ে শ্রদ্ধাের পুষ্পাঞ্জলি প্ৰদান করিত। তাহার ভক্তিপূর্ণ জ্ঞানগর্ভ উপদেশামৃতে ত্ৰিতাপ-দগ্ধ মানব শান্তি লাভ করিত;-“স্বধৰ্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরীধৰ্ম্মে ভয়াবহঃ” জ্ঞান করিয়া হিন্দুধৰ্ম্মের চিরশান্তি-পরিমল স্নিগ্ধচ্ছায়াই গৌরবের লীলাভূমি মনে করিত। মহৰ্ষির জীবনের সকল কথা ছাড়িয়া দিলেও, তিনি যৌবনে যে অদ্ভূত ত্যাগ স্বীকার করিয়াছিলেন—অতুল ঐশ্বৰ্য্য, সুখসম্পদ স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়া সত্যের ও ন্যায়ের মৰ্যাদা রক্ষা করিয়া পিতার উত্তমণগণকে সৰ্ব্বস্ব দান করিয়াছিলেন, তাহারই গৌরবগাথা দেবেন্দ্রনাথের পুণ্য-স্মৃতিকে অমরত্ব প্ৰদান করিবে—সে পুণ্য-চরিত্ৰ-মাধুরীতে মানব-হৃদয় চিরদিনই আকৃষ্ট হইবে,-সেই সমুজ্জল প্রভার দিকে চাহিয়া স্বার্থীন্ধ সংকীর্ণচিত্ত মানব আপনার ক্ষুদ্রতায় ক্ষুব্ধ-লজ্জিত হইবে ।