পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্ৰহ্মানন্দ কেশবচন্দ্ৰ সেন । 8s শ্ৰীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই উদ্যানে আগমন করিয়া , ভগবৎপ্রসঙ্গে শুষ্ক কেশবচন্দ্রের হৃদয় ভক্তির পূতধারায় স্নিগ্ধ।--তৃপ্ত করিলেন ; দ্বিগ্বিজয়ী বক্তা কেশবচন্দ্র নীরবে রামকৃষ্ণ-মুখ-নির্গলিত উপদেশামৃতে শান্তি ও তৃপ্তি লাভ করিলেন-ঈশ্বরের মায়িক ভাবের অপূৰ্ব্ব ব্যাখ্যায় জ্ঞান ও ভক্তির সন্মিলন-মাধুৰ্য্য উপলব্ধি করিলেন। ইহার পর কেশবচন্দ্ৰ বহুবার দক্ষিণেশ্বরে গিয়া পরমহংসদেবের উপদেশ-সুধাপানে উপকৃত হইয়াছিলেন। একবার কেশবচন্দ্ৰ সাতখানি নৌকায় খোল-করতাল ধ্বনিতে জাহ্নবী-বক্ষ প্ৰতিধ্বনিত করিয়া সঙ্কীৰ্ত্তন করিতে করিতে সদলবলে শিঙ্গা বাজাইয়া দক্ষিণেশ্বরে পরমহংসদেবের নিকট আসিয়া, তাহাকে লইয়া সঙ্কীৰ্ত্তনানন্দে আত্মহারা হইয়াছিলেন। পরমহংসদেবের উপদেশে কেশবচন্দ্রের প্রাণে সুনিৰ্ম্মল ভক্তিপ্রবাহিণী বহিতে লাগিল ; তিনি গভীর যোগসাধনে তন্ময় হইলেন ; আধ্যাত্মিক জীবনে নূতন সত্য লাভ:করিলেন। অতঃপর কেশবচন্দ্ৰ বক্তৃতায়-সাধু অঘোরনাথ, বিজয়কৃষ্ণ প্রভৃতিকে ভক্তি ও কৰ্ম্ম-সাধনের উপদেশ দিতে লাগিলেন । এই সময়ের অবস্থার কথা তিনি ‘জীবনবেদে’ লিখিয়াছেন ঃ-“জীবনে প্ৰথমে ভক্তি ছিল না, প্রেমের ভাবও অধিক ছিল না, অল্প অনুরাগ ছিল। ছিল বিশ্বাস, ছিল বিবেক, ছিল বৈরাগ্য ! * * ঈশ্বরপ্রসাদে অবশেষে আমার হৃদয়ে ভক্তির সঞ্চার হইল। ক্ৰমে ভক্তি প্ৰমত্ত তায় পরিণত হইল। ভক্তি যখন বাড়িতে লাগিল, তখন বুঝিলাম, ভক্তিকে স্থায়ী করিবার জন্য যোগ আবশ্যক। * * ভক্তি ও যোগ উভয়ের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়িল ; সাধনে প্রয়াস জন্মিল।” অতঃপর কেশবচন্দ্ৰে যেন এক ঐশী শক্তির সঞ্চার হইল-ৰ্তাহার মৰ্ম্মস্পৰ্শী উপদেশ শুনিবার জন্য শিক্ষিত যুবকদল ছায়ার ন্যায় তাহার অনুসরণ করিতে লাগিল। 8