পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়েছিল অশিক্ষিত অপরিচ্ছন্ন ঝাড়দারদের হাতে। অবশ্য উপযুক্ত শ‍ুশ্র‌ূষার এই অভাব সত্ত্বেও দরছর আগে যেদিন এক বাক্স হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আর আধখানা ডাক্তার নিয়ে এই গ্রামে এসেছিলাম, সেদিনকার চেয়ে আজ কলেৱা থেকে মত্যুর হার অনেক কম। স্যালাইন ইঞ্জেকশনের কাজ অলৌকিক, রোগের গোড়ার দিকে দিতে পারলে শতকরা আশী ভাগ সেরে ওঠার সম্ভাবনা।

কলেরা রোগীদের শ‍ুশ্র‌ূষায় অপূর্ব আনন্দ পেতাম, বিশেষত যখন আমাদের শ‍ুশ্র‌ূষায় অনেকে মৃত্যুর কবল থেকে ফিরে আসতো তখন আনন্দের অবধি থাকত না। কিন্তু কোনোরকম সাবধানতার বালাই আমার ছিল না। বাড়ি এসে কখনো জামাকাপড় শ‍ুদ্ধির চেষ্টা করিনি, এতক্ষণ কোথায় ছিলাম সে খবরটা যে এগিয়ে গিয়ে সকলকে জানাইনি তা বলাই বাহুল্য। অথচ নিজের ছোঁয়াচ লাগেনি, অপর কাউকেও ছোঁয়াচ দিইনি। কী করে এমন হল ভেবে পাই না।

কলেরা রোগী ঘাঁটতে, মায় নোংরা জামাকাপড় নাড়াচাড়া করতেও ঘৃণাবোধ হয়নি। মুশকিল বাধত আসল বসন্ত নিয়ে। গ‍ুটিগুলো যখন ভালোরকম পেকে উঠতো তখন রোগীর কাছে বসে থাকার জন্যই মনের সমস্ত জোরটুকু খাটাতে হত। তব এই স্বেচ্ছাকৃত কাজের একটা শিক্ষার দিক ছিল, তাই ফেলতে পারিনি।

শ‍ুশ্র‌ূষার সঙ্গে এসে জটল আরো নানান উপসর্গ। চিকিৎসা সেবা-শ‍ুশ্রূষা পরও যারা মারা যায় তাদের কী গতি হবে? মৃতদেহের ভার নেবার, সৎকার করবার কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। যেসব গড়ার দাবিদার কেউ ছিল না সেগুলোকে মিউনিসিপ্যালিটির ঝাড়ুদারেরা যেমন তেমন করে পার করে দিত। কিন্তু মৃত্যুর পর এমন ব্যবহার কোন লোকে কামনা করে? গতরাং সৎকারের ভারটাও নিতে

১০৬