পাতা:ভাষা বিজ্ঞান নামক বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



[ ৩ ]

 পূর্বে উক্ত হইয়াছিল যে মনুষ্যেরা পরামর্শ করিয়া বস্তুর নাম রাখিত, বাস্তবিক অধিকাংশ নামের সহিত তম্বোধক বস্তুর কোন স্বভাব-সিদ্ধ সম্বন্ধ ছিল না; সুতরাং একদল যে বস্তুর যে নাম রাখিত তাহা না জানিলে অন্তে তাহা বুঝিতে পারিত না। যে সমস্তু লোক এক দলে থাকিত তাহারা পরস্পরের কথা বুঝিতে পারিত। যখন তাহারা পৃথক হইত, তখন একত্র থাকা কালীন আবিষ্কৃত কথা গুলির ঐক্য থাকিত বটে কিন্তু পৃথক হওয়ার পরে আবিষ্কৃত কথার ঐক্য থাকিত না। এক দলস্থ লোকেরা যে বস্তুর যে নাম রাখিত অন্ত দলস্থেরা তাহা না জানাতে কাহার অন্ত নাম রাথিত। ইহাতেই দলে দলে ভাষা ভিন্ন হইয়াছিল। তাহা হইতেই এক্ষণে মনুষ্য জাতির এত বিভিন্ন ভাষা হইয়াছে। বাস্তবিক ভাষার ভিন্নতা ঈশ্বরকৃত নহে। কারণ ঈশ্বরকৃত হইলে, কোন ভাষাবাদীর সন্তান আজন্ম ভিন্ন ভাষীর মধ্যে থাকিয়াও বিনা চেষ্টায় জাতিভাষা জানিতে পারিত কিন্তু কার্য্যতঃ তাহা হয় না।

লেখ্য ভাষা।

ভাষা দুই প্রকার লেখ্য ভাষা এবং কথ্য ভাষা। ভাষা সৃষ্টির পর বহুকাল পর্য্যন্ত কেবল কথ্য ভাষাই ছিল। এখনও অনেক অসভ্য জাতির মধ্যে কেবল মাত্র কথ্যভাষা প্রচলিত আছে। তাহদের মধ্যে লেখ্যভাষা এপর্য্যন্ত হয় নাই। আদিম মনুষ্যেরা সকলেই যাযাবর ছিল। সেই অবস্থায় লেখ্যভাষা ছিল না। তাহারা যখন অনেক দূর সভ্য হইল, কৃষি বাণিজ্য এবং পশুপালন আরম্ভ করিল, সামান্যরূপ শিল্পকর্ম্ম করিতে লাগিল, যখন তাহারা যাযাবর ভাব ত্যাগ করিয়া গৃহস্থ হইল, তখনই তাহাদের লেখ্যভাষা নিতান্ত প্রয়োজনীয় হইল। তখন তাহারা বিবেচনা করিল যে, পরস্পর সাক্ষাৎ না করিয়াও আলাপ করা যাইতে পারে এমন কোন উপায় করা উচিত। আর সমুদায় প্রয়োজনীয় কথা চিরকাল মনে রাখা অসাধ্য অতএব এমন কোন উপায় করা উচিত যে তদ্বারা সেই সমুদায় কথা চিরকাল স্মরণ রাখার দায় হইতে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় অথচ স্মরণ রাখিবার ফলটি বিদ্যমান থাকে। এই অভিপ্রায় সাধন জন্য তাহারা পরামর্শ করিয়া এক এক শব্দের পরিবর্তে এক এক চিহ্ন নিরূপণ করিল। ইহার শব্দমূলভাব উৎপন্ন হইল। এইরূপ একবর্ণ শশমূলা ভাষা এখনও চীন তিব্বত ও তাতার দেশে প্রচলিত আছে। ভারতবর্ষে