পাতা:ভাষা বিজ্ঞান নামক বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ৪ ]

এবং মিশর দেশে অতি প্রাচীনকালে একবর্ণা ভাষা ছিল ইহার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় । অনুমান হয় যে, যে সকল জাতি অনন্য সাহায্যে সভ্য হইয়াছে তাহাদের সকলেরই প্রথম একবর্ণা ভাষা ছিল। কিন্তু যে সমস্ত জাতি অন্য জাতির সাহায্যে সভ্য হইয়াছে তাহাদের তদ্রুপ না হইলেও হইতে পারে।

অক্ষর ও বর্ণ।

 একবর্ণ ভাষা সৃষ্টির পর লেখা পড়ার চর্চা আরম্ভ হইল। তখন মনুষ্যের অপেক্ষাকৃত শীঘ্র শীঘ্র উন্নতি হইতে লাগিল। কিন্তু অল্পকাল মধ্যেই তাহার বুঝিতে পারিল যে একবর্ণা ভাষা অতিশয় অসুবিধা জনক, ইহাতে কোন নূতন কথা লেখা যায় না এবং কোন অজ্ঞাত শব্দ বোধক চিহ্নও পাঠ করা যায় না; সুতরাং লক্ষ লক্ষ শব্দ এবং তাহার প্রতিরূপ সমস্ত গুলি বর্ণ মুখস্থ করিতে হয়। এই কষ্ট দূরীকরণ জন্য তাহারা স্বজাতীয় ভাষায় এমন কয়েকটি উচ্চারণ যোগ্য ক্ষুদ্রতম অংশ বাহির করিতে চেষ্টা করিল যৎসংযোগে তদ্ভাষার সমস্ত কথাই লেখা যাইতে পারে। তদনুসারে তাহারা যে সকল ক্ষুদ্রতম অংশ বাহির করিল তাহদের নাম অক্ষর এবং সেই সকল অক্ষর যে চিহ্ন দ্বারা লেখা যায় তাহদের নাম বর্ণ* যে কারণে মনুষ্য জাতির কথ্য ভাষা ভিন্ন হইয়াছিল সেই কারণেই লেখ্য ভাষাও ভিন্ন হইয়াছিল।  যে ভাষায় তদ্ভাষা প্রচলিত প্রত্যেক অক্ষর প্রকাশক এক একটি বর্ণ আছে তাহাকে পূৰ্ণবর্ণ ভাষা বলা যায়। যথা সংস্কৃত, বাঙ্গাল, ইত্যাদি। যে ভাষার প্রত্যেক অক্ষর প্রকাশক পৃথগ বর্ণনাই, এক মাত্র অক্ষর প্রকাশ জন্য দুই তিন বর্ণ একত্র করিতে হয় অথবা একমাত্র বর্ণ দুই তিন অক্ষরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় তাহাকে অপূর্ণ বর্ণ বা কুণ্ঠবর্ণ বলা যায়। যথা ইংরাজী পারসী ইত্যাদি।


 * অনেকেই ভ্রম বশতঃ বর্ণ এবং অক্ষর এই দুইটি শব্দ একার্থক বোধ করেন। কিন্তু অক্ষর (ন ক্ষরোতি ইতি অক্ষয়ং) শব্দের অর্থ ভাষার উচ্চারণ যোগ্য ক্ষুদ্রতম অংশ; সুতরাং লেখা ভাষায় অক্ষর নাই। ইহা কেবল কথ্য ভাষাতেই প্ৰযুজ্য। বর্ণ সমূহ সেই অক্ষর প্রকাশক চিহ্ন; সুতরাং কথ্য ভাষায় বর্ণ নাই। পদার্থের দৃশ্য ভাগের নাম বর্ণ (বস্তোরাকৃতি বর্ণ ঐ দৃষ্টেবিয়ে অর্থাৎ বস্তুর আকৃতি এবং বর্ণ এই দুইটি পৃষ্ঠ পদার্থ) সুতরাং তাহা কথ্য ভাষায় অপ্ৰযুজ্য। বৈধী প্রভৃতি চতুৰ্ব্বিধ গুণ কেবল অক্ষরেই সম্ভব, বর্ণের প্রতি যুজ্য নহে।