পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুয়েরা আজ হয়তো আবার জাগতে আরম্ভ করবে। আধঘণ্টা পরে, গগন একবার নিচে থেকে ঘুরে এল। নিচের বারান্দায় এখনো কয়েকজন অনুগ্রহপ্রাথিনী বিধবা তরকারি কুটছে, ঘুমে ও শ্রাস্তিতে মুখে তাদের কথা নাই। দোতলায় বেলারানীর ঘরের দরজা বন্ধ। এবার সতরঞ্চিতে শুয়ে গগন বিড়ি টানতে লাগল। উনানের আঁচ সয়ে সয়ে গায়ের চামড়া বোধহয় বিগড়ে গেছে, সামান্য ঠাণ্ডাতেই বড় কষ্ট হতে লাগল। জর এসে শীত করার মতো ! রাত জেগে ঘুমিয়েছে বেলারানী, তবু সে উঠল খুব ভোরেই। বাড়ির প্ৰায় সকলেই অবশ্য তখন উঠে পড়েছে। সিড়ি দিয়ে বেলারানী নিচে নামতে না নামতে কোথা থেকে গগন এসে দাড়াল । “খোকা ঘুমোচ্ছে দিদিমণি, তোমার খোকা ?” “হঁ্যা । কেন ?” “একবারটি কোলে নিতাম ?” “নিও। ঘুম ভাঙ্গলে নিও।” শিথিল শ্ৰান্ত বেলারানী হঠাৎ জীবন্ত হয়ে ছিটকে সরে গেল । ধোপ দুরস্ত কাপড়ে মালকেঁচা এটে, কোমরে গামছা বেঁধে, বাবরি চুল সামলাতে মাথায় একটুকরো লালসালুর ফেটি জড়িয়ে গগন প্ৰকাণ্ড হাত দিয়ে ডেকচির ভেতরটা নাড়তে থাকে, চেনা মানুষ কাছে এসে । খাতির করে বলে, “কেমন আছ গগন ?” হাতা খুনতি নাড়ী চাড়া সুরু করেই গগনের মুখে সফল শিল্পীর অনুদার আত্মগরিমার ছাপটা স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। সহকারী পণ্ডু ও কানাই উঠছে বসছে তারই হুকুমে ৷ পঞ্চ বয়সে বড়, একটু রোগ এবং বঁকা, কপালে তোলা গাঁজাখোরের চোখ, নেশা কিন্তু তার দেশি মদের । কানাই-এর বাড়ি কিশোর বয়সেই বন্ধ হয়ে গেছে, মুখের ক্ষেতে গোফ 8