পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘সত্যি লেগেছে ? মৃগনয়নার সামনে হাঁটু পেতে বসে বিবৰ্ণ মুখে বিস্ত তার মুখের দিকে চেয়ে রইল। তখন মৃগনয়নার মুখে দেখা গেল হাসি। বিশুর মাথা দুই হাঁটুর মধ্যে গুজে দিয়ে তার চুলে আঙল চালাতে চালাতে সে মিষ্টি সুরে বলল, ‘সত্যি লেগেছে। তোমার দোষ নেই, তুমি তো কিছু জানো না। তুমি আমাকে ভালোবাসতে শিখেছি, আর এইটুকু শেখনি যে ছুটে এসে আমাকে তোমার ধাক্কা দিতে নেই? আমি ছুটে যাব, তুমি আস্তে আস্তে এগিয়ে এসে আমায় ধরে ফেলবে। বাড়ের মতো গুতো দিলে মেয়েদের লাগে না ?” বিস্ত প্ৰতিবাদ জানিয়ে বলল, “আমারও তো লেগেছে।” "পুরুষ হলে লাগত না।” পাঁচ মিনিট পরে দুজনের জোরালো হাসি কানে যেতে মা হাক দিয়ে বললেন, “ও বাবা বিশু, রাত যে অনেক হয়ে গেল বাবা।” যাওয়ার আগে বিশু বলল, “সেখানে যাৰে ?” না। আজ বড় ঘুম পেয়েছে।” বিস্ত বাড়ি পৌছবার আগেই মৃগনয়ন ঘুমিয়ে পড়ল। মা এসে মশারি ফেলে আলো নিভিয়ে দিয়ে বাইরে গিয়ে দাড়ালেন। মেয়েকে তিনি বুঝতে পারেন না, পেটের মেয়েকে ! মেয়ে তার ভক্তিমতী। কিন্তু মায়ের মতো মন্দিরে গিয়ে কোনো দিন প্ৰণাম করে না, দশ-বারো বছর বয়স পৰ্যন্ত বাপের সঙ্গে উপাসনায় বসতি, এখন তাও বসে না । হাতে গিয়ে এক ভগবানকে প্ৰণাম করে। আকাশে জলন্ত আগুনের গোলা ছুটে যেতে দেখতে পায়। চলাফেরা কথাবার্তায় কিছুই ধরা যায় না। কোমল মন তার এমন মিষ্টি স্বভাব, কোন ঘরে সে যাবে ভেবে বুকটা তার যুকপুক করে । তবু মেয়েটাকে তিনি বুঝতে পারেন না । পেটের সন্তানকে যেন ভিন্ন মনে হয় । 钴朝