পাতা:ভেজাল - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়ার সখ চাপে, আবার কেটে যায়। স্ত্রীকে অত্যন্ত ভালোবাসে। ছেলেটিকে হাসিয়ে কঁদিয়ে আদর করে অবর্ণনীয় সুখ পায়। ধনঞ্জয় তাকে পছন্দ করেন এবং দেড়শো টাকা মাইনে দেন । “বাঙ্গাতলায় লোকে না খেয়ে মরছে শুনে ধনঞ্জয়ের ভাবনা হয়েছিল। গায়ের লোকের ভালোমন্দৈর দায়িত্ব তো তার। গায়ের একত্ৰিশ জনকে তিনি সম্প্রতি আপিসে কাজ দিয়েছেন। ধনঞ্জয় নিজেই যে ফঁাপিছিলেন তা নয়, তার জানাশোনা আরও অনেকে ফুলে ঢোল হয়ে যাচ্ছিল। লোকের প্রয়োজনও বেড়েছিল সেই অনুপাতে-আপিসে, কারখানায় এবং মফস্বলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটা ওটা গড়ে তোলবার স্থানে। শুধু বাঙ্গাতলা নয়, আশেপাশের আরও কতগুলি গায়ের হাজার খানেক লোককে কাজ দেবার সাধা ধনঞ্জয়ের ছিল। কেশপুরে মস্ত কাজ হচ্ছিল, সকলকে তিনি সেখানে পাঠিয়ে দিতেন। সবাই খাওয়া পেত, থাকার ঘর পেত, মজুরি পেত-তিনটিই ভালো পেত। কিন্তু ইচ্ছাটা প্ৰকাশ পাওয়ায় গায়ে গায়ে তার নামে কুৎসা রটে গেল, তিনি নাকি কুলি চালানের দালালি নিয়েছেন। যত চাষী মজুর হতে রাজী ছিল তাদের ৫ একজনকেও তিনি তাই কাজ দেন নি। নিন্দেটা তাতে প্ৰমাণ হয়ে যেত। তারপর ধনঞ্জয় স্থির করেছেন বাঙ্গাতলায় দুঃস্থদের খাদ্য বিতরণ করবেন। না করে উপায়ও তার ছিল না। নানা দিক থেকে চাপ পড়ছিল। তার মতো বড়লোক অনেকে বিতরণ করছে, এ একটা চাপ । কনটাক্ট দেবার কর্তারা ইঙ্গিত করছেন, সে আরেকটা চাপ | বাঙ্গাতলা হিতৈষিণী সমিতি ( প্রেসিডেণ্ট-ধনঞ্জয় সরকার) গায়ের লোকের প্ৰত্যাশাকে আবেদন নিবেদনের রূপ দিচ্ছে, সেও চাপ । তাছাড়া পূর্বোক্ত কুৎসাটির প্রতিকার করার বাসনার চাপ এবং হৃদয় নামক অঙ্গটির দয়াদাক্ষিণ্য ও উদারতার চাপ তো আছেই। কাজের ভারটা তিনি দিয়েছেন মাধবকে ; সেই সঙ্গে দরকারী উপদেশও। ክr>