পাতা:মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞাই পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাল্টা মগজধােলাই তার অপচেষ্টাকেও পাল্টে দিয়েছিল। আসুন ফিরে দেখি ঘটনাটা মগজধােলাইয়ের চাপানউতাের আমরা জানি, ভারত একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি আমাদের সংবিধানের সংশােধনী বিলে ঢুকে পড়লাে কোনও সংজ্ঞা ছাড়াই। সালটা ১৯৭৫। দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে হেরে গেলেন। ফলে পদত্যাগ করতেই হয়। প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়বাে? ই...ল্লি...... আরকী? গণতান্ত্রিক ভারতের ডিক্টেটর প্রধানমন্ত্রী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলেন। বিরােধী দল থেকে নিজের দলের বেচাল নেতাদের জেলে পুরে দিলেন। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলােতে ঢি ঢি পড়ে গেল। শ্রীমতী গান্ধীর পাশে শুধু সােভিয়েত-জোট এই সমাজতান্ত্রিক’ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ জোটকে সন্তুষ্ট করতেই ৪২ তম সংবিধান সংশােধনী বিলে সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ দুটি ঢুকিয়ে দিলেন শ্রীমতী গান্ধী। কিন্তু শব্দ দুটির কী সংজ্ঞা–সংবিধানে তার উল্লেখ রাখলেন না। যুক্তি দেখালেন, সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলােতে শব্দ দুটির সংজ্ঞা এতই স্পষ্ট যে আবার করে সংজ্ঞা উল্লেখের কোনও প্রয়ােজন নেই। তারপরেই শ্রীমতী গান্ধী সব ধর্মস্থানগুলােতে মাথা ঠেকিয়ে ধর্মের রাজনীতিতে নামলেন। মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বার এবং বিভিন্ন ধর্মমতের বিখ্যাত ধর্মগুরুদের আশ্রমে শ্রদ্ধা চড়িয়ে সেই ধর্মমতের লােকদের ভােট টানার চেষ্টায় মাতলেন। পাশাপাশি আইনবিদ, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, ধর্মবেত্তা, নীতিবেত্তা প্রভৃতিদের ময়দানে নামালেন। তারা মানুষের মধ্যে একটা কথা নানাভাবে ঢুকিয়ে দিলেন যে‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র মানে, রাষ্ট্র সব ধর্মকেই সমানভাবে দেখবে, সমানভাবে পেটোনাইজ করবে। ধর্মস্থানে দান করলে আয় করদাতা বাড়তি সুবিধে পাবে। মুসলিম ধর্মের মানুষ হজে যাবে সরকারি খরচে। ধর্মীয় ট্রাস্টগুলাে যত বড় ধনীই হােক, করের আওতায় আসবে না। এমনি গাদাগুচ্ছের সুযােগ-সুবিধে করে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার এক নতুন সংজ্ঞা মানুষের মনে গেঁথে দিলেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলাের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (Secular) শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। তাতে স্পষ্ট বলা আছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি ও শিক্ষানীতি হবে সম্পূর্ণ ধর্মবর্জিত। রাষ্ট্রনায়কগণ কোনও ভাবেই প্রকাশ্যে ধর্ম-আচরণ করতে পারবেন না।

১৪

১৪