পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
৮১

আর, একবার দেখাও।” তাহার কথা শুনিয়া ব্রাহ্মণের ভয় দূর হইল, তিনি চক্রের নিকটে গিয়া চৈতন্যদাসের অঙ্গ স্পর্শ করিলেন। চৈতন্যদাস বলিয়া উঠিল, “এ ত তোমার স্পর্শ নয় প্রভু! এ কাহার কঠোর করস্পর্শ। রাধাবিনোদ তোমার নবনীত কোমল করকমল আর একবার আমার অঙ্গে বুলাইয়া দাও। মধুসূদন, মধু, মধু।” ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “চৈতন্যদাস কি দেখিতেছ?” বৈরাগী নয়ন মুদিত রাখিয়াই কহিল, “ঠাকুর, বড় সুন্দর বড় সুন্দর, আর ভয় নাই। রাধাবিনোদ আসিয়াছেন, আমার শিয়রে দাঁড়াইয়া আছেন, তাঁহার করস্পর্শ্বে আমার সকল যাতনা দূর হইয়াছে।” সহসা ব্রাহ্মণের দেহ রোমাঞ্চিত হইল, তাঁহার মনে হইল যেন কাহার ছায়া চক্রে আবদ্ধ বৈষ্ণব-দেহের চারিপার্শ্বে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, ব্রাহ্মণের সমস্ত দেহ কম্পিত হইল। তিনি ভূমিতে লুটাইয়া সেই অশরীরী ছায়াকে দূর হইতে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিলেন। চৈতন্যদাস বলিতে লাগিল, “রাধাবিনোদ, সমস্ত জীবনের সঞ্চিত কলুষরাশি মার্জ্জনা করিয়া যদি দেখা দিলে তাহা হইলে আর একবার দাঁড়াও, শেষ মুহূর্ত্ত পর্য্যন্ত থাকিও।” গৃহতলে শয়ান ব্রাহ্মণের মনে হইল যে সুগন্ধি ধূপধূমে কক্ষ আমোদিত হইয়াছে! ব্রাহ্মণ বৈষ্ণবের উন্মাদনায় উন্মত্ত হইয়া উঠিল, চৈতন্যদাসের রক্তসিক্ত চরণযুগল ধারণ করিয়া কহিল, “বৈরাগী, তুমি কি দেখিলে? সারা জীবনের ধ্যানেও যাহা নয়নপথে আসে নাই, সে দর্শনদুর্লভ রূপ তুমি মুহূর্ত্তের আহ্বানে কেমন করিয়া