পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

উঠল। শুধু মালয় উপদ্বীপ কেন, সমগ্র এসিয়ার মধ্যে সিঙ্গাপুর একটী প্রধান বন্দর। বন্দরে ঢুকবার সময়েই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল।

 অসংখ্য ছােট ছােট পাহাড় জলের মধ্যে থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তাদের ওপর সুদৃশ্য ঘরবাড়ী— চারিদিকে পিনাংএর মত মাছ ধরবার প্রকাণ্ড আড্ডা। নীল রংয়ে চিত্রিত চক্ষু ড্রাগন ঝোলানো পাল-তােলা চীনা জাঙ্ক ও সামপানে সমুদ্রবক্ষ আচ্ছন্ন করে রেখেচে।

 বন্দরে ঢুকবার মুখেই একখানা ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ প্রায় মাঝ দরিয়ায় নােঙর করে আছে কয়লা নেবার জন্যে। তার প্রকাণ্ড ফোকরওয়ালা দুই কামান ওদের দিকে মুখ হাঁ করে আছে যেন ওদের গিলবার লোভে। আরও নানা ধরনের জাহাজ, ষ্টীমলঞ্চ, সামপানে, মালয় নৌকার ভিড়ে বন্দরের জল দেখা যায় না। যেদিকে চোখ পড়ে শুধু নৌকো আর জাহাজ। বিমলের মনে হ’ল কলকাতা এর কাছে কোথায় লাগে? তার চেয়ে অন্ততঃ দশগুণ বড় বন্দর।

 চারিদিকেই বার সমুদ্র, বন্দরের মুখে ছােটবড় জাহাজ দাড়িয়ে, তাদের মধ্যে আরও দু’খানা বড় যুদ্ধ জাহাজ ওদের চোখে পড়লো। বন্দরের উত্তর-পূর্ব্ব কোনে তিন মাইলের পরে বিখ্যাত নৌ-বহরের আড্ডা। দুর থেকে দেখা যায়, বড় বড় ইস্পাতের খুঁটী, বেতারের মাস্তুলে সেদিকটা অরণ্যের সৃষ্টি করেচে।

 জাহাজের কয়লা নেবার একটা প্রধান আড্ডা সিঙ্গাপুর। পূর্ব্ব দিক থেকে পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে পূর্ব্বগামী সব রকমই জাহাজকেই এখানে দাঁড়াতে হবে কয়লার জন্যে। এর বিপুল ব্যবস্থা আছে, বহুদুর ধরে পর্ব্বতাকারে কয়লা রক্ষিত হচ্ছে। যেন সমুদ্রের ধারে ধারে অনেক দূর পর্য্যন্ত একটা অবিচ্ছিন্ন কয়লার পাহাড়ের সারি চলে গিয়েচে।