পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

আত্মীয়-স্বজনকে তুলে দিতে এসেছিল, তারা তীরে দাঁড়িয়ে রুমাল নাড়তে লাগলো।

 সুরেশ্বরকে কেউ তুলে দিতে আসেনি, কারণ কলকাতায় তার জানাশোনা বিশেষ কেউ নেই! সবে সে চাকরীটা পেয়েচে, একটি বড় ঔষধ ব্যবসায়ী ফার্ম্মের ক্যান্ভাসার হয়ে সে যাচ্ছে রেঙ্গুন ও সিঙ্গাপুর।

 সুরেশ্বরের বাড়ী হুগলী জেলার একটা গ্রামে। বেজায় ম্যালেরিয়ায় দেশটা উচ্ছন্ন গিয়েচে, গ্রামের মধ্যে অত্যন্ত বনজঙ্গল, পোড়ো বাড়ীর ইট স্তূপাকার হয়ে পথে যাতায়াত বন্ধ করেচে, সন্ধ্যার পর সুরেশ্বরদের পাড়ায় আলো জ্বলে না।

 ওদের পাড়ায় চারিদিকে বনজঙ্গল ও ভাঙা পোড়ো বাড়ীর মধ্যে একমাত্র অধিবাসী সুরেশ্বরেরা। কোনো উপায় নেই বলেই এখানে পড়ে থাকা― নইলে কোন্ কালে উঠে গিয়ে সহর বাজারের দিকে বাস করতো ওরা।

 সুরেশ্বর বি, এস, সি পাশ করে এতদিন বাড়ীতেই বসে ছিল। চাকুরী মেলা দুর্ঘট আর কেই বা করে দেবে― এই সব জন্যেই সে চেষ্টা পর্য্যন্ত করেনি। তার বাবা সম্প্রতি পেন্সন্ নিয়ে বাড়ী এসে বসেছেন, খুব সামান্যই পেনসন্— সে আয়ে সংসার চালানো কায়ক্লেশে হয় কিন্তু তাও পাড়াগাঁয়ে। সহরে সে আয়ে চলে না। বছর খানেক বাড়ী বসে থাকবার পরে সুরেশ্বর গ্রামে আর থাকতে পারলে না। গ্রামে নেই লোকজন, তার সমবয়সী এমন কোনো ভদ্রলোকের ছেলে নেই যার সঙ্গে দুদণ্ড কথাবার্ত্তা বলা যায়। সন্ধ্যা আটটার মধ্যে খেয়ে দেয়ে আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়াই গ্রামের নিয়ম। তারপর আর কোনদিকে সাড়া শব্দ নেই।