পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
কারাকাহিনী।

লোকের মনে কষ্ট হইয়াছে। মিঃ নায়ডু ও মিঃ পোলক সংবাদ পাইয়াছিলেন, তাঁহারা ষ্টেশনে আসিয়া জুটলেন। আমার এই অবস্থা দেখিয়া তাঁহাদের কান্না পাইল। এই সকল কান্নাকাটির কোনও কারণ ছিল না। এ দেশে রাজনৈতিক ও সাধারণ কয়েদীর-মধ্যে প্রভেদ রাখা গবর্ণমেণ্টের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের যত বেশী কষ্ট দেওয়া হইবে এবং যত কষ্ট আমরা ভোগ করিব, তত শীঘ্রই মুক্তি আসিবে। আর আমার মনে হয়, জেলের পোষাক পরায় ও বোঝা বহায় কোনও কষ্টই নাই। কিন্তু জগৎ এমনই যে এ কথা বোঝে না। এই ঘটনায় ইংলণ্ডে বেশ আন্দোলন হইল।

 পথে দাবোগার জন্য কোনও কষ্টই হয় নাই। ঠিক করিয়াছিলাম, দারোগা নিজে যদি বিশেষ অনুমতি না দেন, তবে জেলে ছাড়া অন্য কোথাও কিছু খাইব না। জেলের খাবারের উপরেই এ পর্যন্ত নির্ভর করিয়া আসিয়াছি। রাস্তার জন্য সঙ্গেও খাবার লওয়া হয় নাই। দাবোগা স্বেচ্ছায় আমাকে খাওয়া দাওয়ার অনুমতি দিলেন। ষ্টেশন মাষ্টার আমাকে কিছু পয়সা দিতে চাহিলেন; তাঁহার সহানুভূতির আতিশয্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিলাম, কিন্তু পয়সা লইতে সম্মত হইলাম না। মিঃ কাজীও ষ্টেশনে ছিলেন, তাঁহার নিকট হইতে ১০ শিলিং লইলাম। আমার এবং দারোগার জন্য তাঁহার নিকট হইতে খাবারও লইলাম।

 সন্ধ্যার কাছাকাছি জোহান্সবর্গে পৌঁছিলাম। দারোগা আমাকে ভারতবাসীদের সহিত মিশিতে না দিয়া চুপে চুপে লইয়া গেলেন। জেলের যে কুঠুরীতে রুগ্ন কাফ্রি কয়েদীরা ছিল, সেখানে আমার বিছানা পাতা হইল। সে রাত্রি অত্যন্ত উদ্বেগে ও চিন্তায় কাটিল। আমাকে অন্য ভারতবাসীর কাছে লইয়া যাইবে, এ কথা আমার জানা ছিল না; আমার ধারণা ছিল, এই খানেই আমাকে রাখিবে। এই ভাবনায় আমি ব্যাকুল