পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।
৬৫

আলো ছিল,—কয়েদীর সুবিধার জন্য নয়, কারণ তাহাতে পড়িবার মত আলো হয় না, আলোর সামনে গিয়া ঐ দাঁড়াইয়া বড় অক্ষরের বই পড়া চলিত। ঠিক আটটার সময়ে আলো নিভাইয়া দেওয়া হইত, কিন্তু রাত্রে ৫।৬ বার জালা হইত, দারোগা দরজার ফাঁক দিয়া চট্ করিয়া কয়েদীকে দেখিয়া নিবে বলিয়া।

 ১১টা বাজিলে ডিপুটী গবর্ণর আসিলেন, তাঁহাকে আমি তিনটী কথা জানাইলাম। প্রথমতঃ, পুস্তক গুলি চাহিলাম; দ্বিতীয়তঃ, আমার স্ত্রীর অসুখের জন্য তাঁহাকে পত্র লিখিবার অনুমতি, ও তৃতীয়তঃ, বসিবার জন্য, একটী বেঞ্চ। প্রথমটীর উত্তর—‘বিচার করিয়া দেখা যাইবে। দ্বিতীয়টীর উত্তর—‘চিঠি লিখিতে পার’; তৃতীয়টীর উত্তর ‘না’ পাওয়া গেল। গুজরাতীতে চিঠি লিখিলাম, তাহার উপর মন্তব্য হইল,—আইনতঃ ইংরেজীতে চিঠি লিখিতে হইবে। বলিলাম, আমার স্ত্রী ইংরেজী জানেন না, আর আমার চিঠি তাঁহার অসুখে ঔষধের কাজ করিবে। বিশেষ কিছু নূতন কথা লিখিবার ছিল না, তথাপি অনুমতি পাইলাম না। ইংরেজীতে লিখিবার আজ্ঞা আমি প্রত্যাখান করিলাম। সেইদিন সন্ধ্যায় আমার পুস্তকগুলি পাইলাম।

 দ্বিপ্রহরে খাবার আসিল। কুঠুরীর মধ্যে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়াই খাইতে হইল। তিনটার সময় আমি স্নান করিবার অনুমতি চাহিলাম। স্নানের জায়গা আমার কুঠুরী হইতে প্রায় ৪০ গজ দূরে। দারোগা বলিল,“বেশ, কিন্তু কাপড় খুলিয়া উলঙ্গ হইয়া যাইতে হইবে।” জিজ্ঞাসা করিলাম, তাহার কি প্রয়োজন? আমি কাপড় পরদার উপর রাখিয়া দিব। তখন সে অনুমতি দিয়া বলিল, যেন বেশী দেরী না করি। শরীর মোছাঁ শেষ হয় নাই, এমন সময়ে প্রভু হাঁক দিলেন,—‘হয়েছে’? উত্তর দিলাম, হইতেছে।