পাতা:মহাত্মা গান্ধীর কারাকাহিনী - অনাথ নাথ বসু.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কারাকাহিনী।

কয়েদীদের রাখা হইত। সেখানে আলোক ও বায়ু চলাচলের জন্য দুইটী ছোট গবাক্ষ ছিল, তাহাতে আবার লোহার শক্ত গরাদ দেওয়া। কক্ষে যে বাতাস আসিত, আমার মতে তাহা পর্য্যাপ্ত নহে। কক্ষের গাত্র টিন দিয়া ঢাকা ছিল, তাহাতে আধ ইঞ্চি করিয়া তিনটি ছিদ্র। জেলার অজ্ঞাতে আসিয়া তাহার ভিতর দিয়া দেখিতেন, কয়েদী কি করিতেছে। আমার কক্ষের সংলগ্ন কক্ষে কাফ্রি কয়েদী থাকিত। তাহার সহিত একত্রে দণ্ডিত কাফ্রি, চীনী ও ‘কেপখোয়’ কয়েদী ছিল। যাহাতে তাহারা পালাইয়া না যায় সেজন্য তাহাদের সকলকে একত্রে রাখা হইত।

 দিনে বেড়াইবার জন্য আমাদের একটী ছোট বারাণ্ডা ছিল। তাহার চারিপাশে প্রাচীর। বারাণ্ডা এতই স্বল্প পরিসর যে তাহাতে চলাফেরা পর্য্যন্ত কষ্টকর। রাজ্যের সীমান্তদেশবাসী কয়েদীদের প্রতি আদেশ ছিল, তাহারা বিনা অনুমতিতে বারাণ্ডার বাহিরে যাইবে না। স্নান ও পায়খানার ব্যবস্থাও ছিল এই বারাণ্ডায়। স্নানের জলের জন্য প্রস্তর নির্ম্মিত দুইটী বড় চৌবাচ্চা, স্নানের জন্য দুইটী স্থান, দুইটী পায়খানা এবং প্রস্রাব করিবার দুইটী স্থানও এই খানে। সেখানে আব্রুর কোনও ব্যবস্থা ছিল না। জেলের নিয়মেও ছিল যে পায়খানা এইরূপ হওয়া চাই যাহাতে কয়েদীরা আলাদা থাকিতে না পারে। সুতরাং দুই তিন জন কয়েদীকে মলত্যাগের জন্য একই লাইনে বসিতে হইত। স্নান ঘরেরও এই ব্যবস্থা। প্রস্রাব করিবার স্থানটি ত’ উন্মুক্ত জায়গায়। প্রথম প্রথম এগুলি আমাদের অসহ্য মনে হইত, অনেকে বড় ঘৃণা বোধ করিত, তাহদের কষ্ট ও হইত। তথাপি, গভীর ভাবে চিন্তা করিলে মনে হয়, কারাগারে ইহা ছাড়া অন্য কোনও ব্যবস্থা সম্ভবে না এবং এই নিয়ম পালনে সাহায্য করায় অন্যায় কিছুই নাই। সুতরাং ধৈর্য্য সহকারে অভ্যাস পরিবর্ত্তন করিয়া ফেলাই সুবিধা, এবং ইহাতে অস্থির হইয়া পড়ার বা ঘৃণা করার কোনও প্রয়োজন নাই।