পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
মহাভারত

ব’সে আছেন, কেউ শুয়ে আছেন। তাঁদের দেখে অগ্নি কামাবিষ্ট হলেন, কিন্তু তাঁদের পাওয়া অসম্ভব জেনে দেহত্যাগের সংকল্প ক’রে বনে চ’লে গেলেন।

 দক্ষকন্যা স্বাহা অগ্নিকে কামনা করতেন। তিনি মহর্ষি অঙ্গিরার ভার্যা শিবার রূপ ধ’রে অগ্নির কাছে এসে সংগম লাভ করলেন এবং অগ্নির শুক্র নিয়ে গরুড়-পক্ষিণী হয়ে কৈলাস পর্বতের এক কাঞ্চনকুণ্ডে তা নিক্ষেপ করলেন। তার পর তিনি সপ্তর্ষিগণের অন্যান্য ঋষির পত্নীরূপে পূর্ববৎ অগ্নির সঙ্গে মিলিত হলেন, কেবল বশিষ্ঠপত্নী অরুন্ধতীর তপস্যার প্রভাবে তাঁর রূপ ধারণ করতে পারলেন না। এই প্রকারে স্বাহা ছ বার কাঞ্চনকুণ্ডে অগ্নির শুক্র নিক্ষেপ করলেন। সেই স্কন্ন অর্থাৎ স্খলিত শুক্র থেকে স্কন্দ[১] উৎপন্ন হলেন; তাঁর ছয় মস্তক, এক গ্রীবা, এক উদর। ত্রিপুরাসুরকে বধ ক’রে মহাদেব তাঁর ধনু রেখে দিয়েছিলেন, বালক স্কন্দ সেই ধনু নিয়ে গর্জন করতে লাগলেন। বহু লোক ভীত হয়ে তাঁর শরণাপন্ন হ’ল, ব্রাহ্মণরা তাঁদের ‘পারিষদ’ ব’লে থাকেন।

 সপ্তর্ষিদের ছ জন নিজ পত্নীদের ত্যাগ করলেন, তাঁরা ভাবলেন তাঁদের পত্নীরাই স্কন্দের জননী। স্বাহা তাঁদের বার বার বললেন, আপনাদের ধারণা ঠিক নয়, এটি আমারই পুত্র। মহামুনি বিশ্বামিত্র কামার্ত অগ্নির পিছনে পিছনে গিয়েছিলেন সেজন্য তিনি প্রকৃত ঘটনা জানতেন। তিনি স্কন্দের জাতকর্মাদি ত্রয়োদশ মঙ্গলকার্য সম্পন্ন ক’রে সপ্তর্ষিদের বললেন, আপনাদের পত্নীদের অপরাধ নেই; কিন্তু ঋষিরা তা বিশ্বাস করলেন না।

 স্কন্দের বৃত্তান্ত শুনে দেবতারা ইন্দ্রকে বললেন, এর বল অসহ্য হবে, শীঘ্র একে বধ করুন; কিন্তু ইন্দ্র সাহস করলেন না। তখন দেবতারা স্কন্দকে মারবার জন্য লোকমাতা[২]দের পাঠালেন। কিন্তু তাঁরা গিয়ে বালককে বললেন, তুমি আমাদের পুত্র হও। স্কন্দ তাঁদের স্তন্য পান করলেন। সেই সময়ে অগ্নিও এলেন এবং মাতৃগণের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্কন্দকে রক্ষা করতে লাগলেন।

 স্কন্দকে জয় করা দুঃসাধ্য জেনেও বজ্রধর ইন্দ্র সদলবলে তাঁর কাছে গিয়ে সিংহনাদ করলেন। অগ্নিপুত্র কার্তিক সাগরের ন্যায় গর্জন ক’রে মুখনির্গত অগ্নিশিখায় দেবসৈন্য দগ্ধ করতে লাগলেন। ইন্দ্র বজ্র নিক্ষেপ করলেন, কার্তিকের দক্ষিণ পার্শ্ব বিদীর্ণ হ’ল, তা থেকে বিশাখ[৩] নামে এক যুবা উৎপন্ন হলেন, তাঁর


  1. স্কন্দ, কার্তিকেয় বা কার্তিকের উৎপত্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন উপাখ্যান প্রচলিত আছে।
  2. মাতৃকা, এঁরা শিবের অনুচরী।
  3. কার্তিকের এক নাম।