পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৩১

দেহ কাঞ্চনবর্ণ, কর্ণে দিব্য কুণ্ডল, হস্তে শক্তি অস্ত্র। তখন দেবরাজ ভয় পেয়ে পার্বতীর সঙ্গে কার্তিকের শরণাপন্ন হলেন এবং তাঁকে দেবসেনাপতি করলেন। মহাদেব এসে কার্তিকের গলায় দিব্য সুবর্ণমালা পরিয়ে দিলেন। দ্বিজগণ রুদ্রকে অগ্নি ব’লে থাকেন, সেজন্য কার্তিক মহাদেবেরও পুত্র, মহাদেব অগ্নির শরীরে প্রবেশ করে এই পুত্র উৎপাদন করেছিলেন।

 দেবগণ কর্তৃক অভিষিক্ত হয়ে কার্তিক রক্ত বস্ত্র প’রে রথারোহণ করলেন, তাঁর ধ্বজে অগ্নিদত্ত কুক্কুটচিহিতে লোহিত পতাকা কালাগ্নির ন্যায় সমুত্থিত হ’ল। ইন্দ্র দেবসেনাকে কার্তিকের হস্তে সম্প্রদান করলেন। সেই সময়ে ছয় ঋষিপত্নী এসে কার্তিককে বললেন, পুত্র, আমরা তোমার জননী এই মনে ক’রে আমাদের স্বামীরা অকারণে আমাদের ত্যাগ করেছেন এবং পুণ্যস্থান থেকে পরিচ্যুত করেছেন, তুমি আমাদের রক্ষা কর। কার্তিক বললেন, আপনারা আমার মাতা, আমি আপনাদের পুত্র, আপনারা যা চান তাই হবে।

 স্কন্দের পালিকা মাতৃগণকে এবং স্কন্দ থেকে উৎপন্ন কতকগুলি কুমার-কুমারীকে স্কন্দগ্রহ[১] বলা হয়, তাঁরা ষোড়শ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিশুদের নানাপ্রকার অমঙ্গল ঘটান। এইসকল গ্রহের শান্তি এবং কার্তিকের পূজা করলে মঙ্গল আয়ু ও বীর্য লাভ হয়।

 স্বাহা কার্তিকের কাছে এসে বললেন, আমি দক্ষকন্যা স্বাহা, তুমি আমার আপন পুত্র। অগ্নি জানেন না যে আমি বাল্যকাল থেকে তাঁর অনুরাগিণী। আমি তাঁর সঙ্গেই বাস করতে ইচ্ছা করি। কার্তিক বললেন দেবী, দ্বিজগণ হোমাগ্নিতে হব্য-কব্য অর্পণ করবার সময় ’স্বাহা’ বলবেন, তার ফলেই অগ্নির সঙ্গে আপনার সর্বদা বাস হবে।

 তার পর হরপার্বতী সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান রথে চ’ড়ে দেবাসুরের বিবাদস্থল ভদ্রবটে যাত্রা করলেন। দেবসেনায় পরিবৃত হয়ে কার্তিকও তাঁদের সঙ্গে গেলেন। সহসা নানাপ্রহরণধারী ঘোরাকৃতি অসুরসৈন্য মহাদেব ও দেবগণকে আক্রমণ করলে। মহিষ নামক এক মহাবল দানব এক বিপুল পর্বত নিক্ষেপ করলে, তার আঘাতে দশ সহস্র দেবসৈন্য নিহত হ’ল। ইন্দ্রাদি দেবগণ ভয়ে পলায়ন করলেন। মহিষ দ্রুতবেগে অগ্রসর হয়ে রুদ্রের রথ ধরলে। তখন কার্তিক রথারোহণে এসে প্রজ্বলিত শক্তি অস্ত্র নিক্ষেপ ক’রে মহিষের মুণ্ডচ্ছেদ করলেন।

  1. গ্রহ—অপদেবতা।