পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৩৭

ধনঞ্জয়, দুরাত্মা দুর্যোধন আর কর্ণ তোমাদের উপহাস করবার জন্য এখানে এসেছে জানতে পেরে দেবরাজ ইন্দ্র আমাকে বললেন, যাও, দুর্যোধন আর তার মন্ত্রণাদাতাদের বেঁধে নিয়ে এস। তাঁর আদেশ অনুসারে আমি এদের সুরলোকে নিয়ে যাব। তার পর চিত্রসেন যুধিষ্ঠিরের কাছে গেলেন এবং তাঁর অনুরোধে দুর্যোধন প্রভৃতিকে মুক্তি দিলেন। যুধিষ্ঠির গন্ধর্বদের প্রশংসা করে বললেন, তোমরা বলবান, তথাপি ভাগ্যক্রমে এঁদের বধ কর নি। বৎস চিত্রসেন, তোমরা আমার মহা উপকার করেছ, আমার কুলের মর্যাদাহানি কর নি।

 চিত্রসেন বিদায় নিয়ে চ’লে গেলেন। ইন্দ্র দিব্য অমৃত বর্ষণ ক’রে নিহত গন্ধর্বগণকে পুনর্জীবিত করলেন। কৌরবগণ তাঁদের স্ত্রীপুত্রের সঙ্গে মিলিত হযে পাণ্ডবদের গুণকীর্তন করতে লাগলেন। যুধিষ্ঠির দুর্যোধনকে বললেন, বৎস, আর কখনও এমন দুঃসাহসের কাজ করো না। এখন তোমরা নিরাপদে স্বচ্ছন্দে গৃহে যাও, মনে কোনও দুঃখ রেখো না। ধর্মপুত্র যধিষ্ঠিরকে অভিবাদন ক’রে দুর্যোধন লজ্জায় ও দুঃখে বিদীর্ণ হয়ে বিকলেন্দ্রিয় আতুরের ন্যায় হস্তিনাপুরে যাত্রা করলেন।

৪৮। দুর্যোধনের প্রয়োপবেশন

 শোকে অভিভূত হয়ে নিজের পরাভবের বিষয় ভাবতে ভাবতে দুর্যোধন তাঁর চতুরঙ্গ বলের পশ্চাতে যেতে লাগলেন। পথে এক স্থানে যখন তিনি বিশ্রাম করছিলেন তখন কর্ণ তাঁর কাছে এসে বললেন, রাজা, ভাগ্যক্রমে তুমি কামরূপী গন্ধর্বদের জয় করেছ, ভাগ্যক্রমে আবার তোমার সঙ্গে আমার মিলন হ’ল। আমি শরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলাম, গন্ধর্বরা আমার পশ্চাদ্ধাবন করেছিল, সেজন্যই আমি যুদ্ধস্থল থেকে চ’লে গিয়েছিলাম। এই অমানুষিক যুদ্ধে তুমি ও তোমার ভ্রাতারা জয়ী হয়ে অক্ষতদেহে ফিরে এসেছ দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।

 অধোমুখে গদ্‌গদস্বরে দুর্যোধন বললেন, কর্ণ, তুমি প্রকৃত ঘটনা জান না। বহুক্ষণ যদ্ধের পর গন্ধর্বরা আমাদের পরাস্ত করে এবং স্ত্রী পুত্র অমাত্য প্রভৃতি সহ বন্ধন ক’রে আকাশপথে হরণ ক’রে নিয়ে যায়। পাণ্ডবগণ সংবাদ পেয়ে আমাদের উদ্ধার করতে আসেন। তার পর চিত্রসেন আর অর্জুন আমাকে যুধিষ্ঠিরের কাছে নিয়ে যান, যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে আমরা মুক্তি পেয়েছি। চিত্রসেন যখন বললেন যে আমরা সপত্নীক পাণ্ডবদের দুর্দশা দেখতে এসেছিলাম তখন লজ্জায় আমার ভূগর্ভে