পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৮
মহাভারত

প্রবেশ করতে ইচ্ছা হ’ল। এর চেয়ে যুদ্ধে মরাই আমার পক্ষে ভাল হ’ত। আমি হস্তিনাপুরে যাব না, এইখানেই প্রায়োপবেশনে প্রাণত্যাগ করব, তোমরা ফিরে যাও। দুঃশাসন, কর্ণ আর শকুনির সহায়তায় তুমিই রাজ্যশাসন ক’রো।

 দুঃশাসন কাতর হয়ে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পদতলে প’ড়ে বললেন, এ কখনই হ’তে পারে না। কর্ণ বললেন, রাজা, তোমার চিত্তদৌর্বল্য আজ দেখলাম। সেনানায়কগণ অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধে শত্রু হস্তে বন্দী হন, আবার নিজ সৈন্য কর্তৃক মুক্তও হন। তোমারই রাজ্যবাসী পাণ্ডবরা তোমাকে মুক্ত করেছে, তাতে দুঃখ কিসের? পাণ্ডবরা তোমার দাস, সে কারণেই তোমার সহায় হয়েছে।

 শকুনি বললেন, আমি তোমাকে বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী করেছি, কিন্তু তুমি নির্বুদ্ধিতার জন্য সে সমস্ত ত্যাগ ক’রে মরতে চাচ্ছ। পাণ্ডবরা তোমার উপকার করেছে তাতে তোমার আনন্দিত হওয়াই উচিত। তুমি পাণ্ডবদের সঙ্গে সৌভ্রাত্র কর, তাদের পৈতৃক রাজ্য ফিরিয়ে দাও[১], তাতে তোমার যশ ধর্ম ও সুখ লাভ হবে।

 দুর্যোধন কিছুতেই প্রবোধ মানলেন না, প্রায়োপবেশনের সংকল্পও ছাড়লেন না। তখন তাঁর সুহৃদ্‌গণ বললেন, রাজা, তোমার যে গতি আমাদেরও তাই, আমরা তোমাকে ছেড়ে যাব না। তার পর দুর্যোধন আচমন করে শুচি হলেন এবং কুশচীর ধারণ ক’রে মৌনী হয়ে স্বর্গলাভের কামনায় কুশশয্যায় শয়ন করলেন।


 দেবগণ কর্তৃক পরাজিত হয়ে দানবগণ পাতালে বাস করছিল। দুর্যোধনের প্রায়োপবেশনের ফলে তাদের স্বপক্ষের ক্ষতি হবে জেনে তারা এক যজ্ঞ করলে। যজ্ঞ সমাপ্ত হ’লে এক অদ্ভুত কৃত্যা মখব্যাদান ক’রে উত্থিত হয়ে বললে, কি করতে হবে? দানবরা বললে, দুর্যোধন প্রায়োপবেশন করেছেন, তাঁকে এখানে নিয়ে এস। নিমেষমধ্যে কৃত্যা দুর্যোধনকে পাতালে নিয়ে এল। দানবরা তাঁকে বললে, ভরতকুলপালক রাজা দুর্যোধন, আত্মহত্যায় অধোগতি ও যশোহানি হয়, প্রায়োপবেশনের সংকল্প ত্যাগ কর। আমরা মহাদেবের তপস্যা ক’রে তোমাকে পেয়েছি, তিনি তোমার পূর্বকায় (নাভির ঊর্ধ্ব দেহ) বজ্রের ন্যায় দৃঢ় ও অশ্বের অভেদ্য করেছেন, আর পার্বতী তোমার অধঃকায় পুষ্পের ন্যায় কোমল ও নারীদের মনোহর করেছেন। মহেশ্বর-মহেশ্বরী তোমার দেহ নির্মাণ করেছেন সেজন্য তুমি দিব্যপুত্র, মানুষ নও। তোমাকে সাহায্য করবার জন্য দানব ও অসুরগণ ভূতলে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁরা


  1. বোধ হয় দুর্যোধনকে উত্তেজিত করার জন্য শকুনি বিদ্রূপ করছেন।