পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫০
মহাভারত

নল আছেন, তাঁকে সেতু নির্মাণ করতে বল। রামের আজ্ঞায় সমুদ্রের উপর সেতু নির্মিত হ’ল, তা এখনও নলসেতু নামে খ্যাত। এই সময়ে বিভীষণ ও তাঁর চারজন সচিব এসে রামের সঙ্গে মিলিত হলেন। রাম সসৈন্যে এক মাস সেতুপথে সমুদ্র পার হলেন এবং লঙ্কায় সৈন্যসমাবেশ করলেন।

 অঙ্গদ রাবণের কাছে গিয়ে রামের এই বার্তা জানালেন।—সীতাকে হরণ ক’রে তুমি আমার কাছে অপরাধী হয়েছ, কিন্তু তোমার অপরাধে নিরপরাধ লোকেও বিনষ্ট হবে। তুমি যেসকল ঋষি ও রাজর্ষি হত্যা করেছ, দেবগণকে অপমান করেছ, নারীহরণ করেছ, তার প্রতিফল এখন পাবে। তুমি জানকীকে মুক্ত কর, নতুবা পৃথিবী রাক্ষসশূন্য করব। রাবণের আদেশে চার জন রাক্ষস অঙ্গদকে ধরতে গেল, তিনি তাদের বধ ক’রে রামের কাছে ফিরে এলেন।

 রামের আজ্ঞায় বানররা লঙ্কার প্রাচীর ও গৃহাদি ভেঙে ফেললে। দুই পক্ষে ঘোর যুদ্ধ হ’তে লাগল, প্রহস্ত ধূম্রাক্ষ প্রভৃতি সেনাপতি এবং বহু রাক্ষস নিহত হ’ল। লক্ষ্মণ কুম্ভকর্ণকে বধ করলেন। ইন্দ্রজিৎ মায়াবলে অদৃশ্য হয়ে রাম-লক্ষ্মণকে শরাঘাতে নির্জিত করলেন। সুগ্রীব মহৌষধি বিশল্যা দ্বারা তাঁদের সুস্থ করলেন। বিভীষণ জানালেন যে কুবেরের কাছ থেকে এক যক্ষ মন্ত্রসিদ্ধ জল নিয়ে এসেছে, এই জলে চোখ ধুলে অদৃশ্য প্রাণীদের দেখা যায়। রাম লক্ষ্মণ সুগ্রীব হনমান প্রভৃতি সেই জল চোখে দিলেন, তখন সমস্তই তাঁদের দৃষ্টিগোচর হ’ল। ইন্দ্রজিৎ আবার যুদ্ধ করতে এলেন। বিভীষণ ইঙ্গিত করলেন যে ইন্দ্রজিৎ এখনও আহ্ণিক করেন নি, এই অবস্থাতেই তাঁকে বধ করা উচিত। কিছুক্ষণ ঘোর যুদ্ধের পর লক্ষ্মণ শরাঘাতে ইন্দ্রজিতের দুই বাহু ও মস্তক ছেদন করলেন।

 পুত্রশোকে বিভ্রান্ত হয়ে রাবণ সীতাকে বধ করতে গেলেন। অবিন্ধ্য তাঁকে বললেন, স্ত্রীহত্যা অকর্তব্য, আপনি এঁর স্বামীকেই বধ করুন। রাবণ যুদ্ধভূমিতে এসে মায়া সৃষ্টি করলেন, তাঁর দেহ থেকে শতসহস্র অস্ত্রধারী রাক্ষস নির্গত হ’তে লাগল। তিনি রাম-লক্ষণের রূপ গ্রহণ ক’রে ধাবিত হলেন। এই সময়ে ইন্দ্রসারথি মাতলি এক দিব্য রথ এনে রামকে বললেন, আপনি এই রথে চড়ে যুদ্ধে করুন। রাম রথারোহণ ক’রে রাবণকে আক্রমণ করলেন। রাবণ এক ভীষণ শূল নিক্ষেপ করলেন, রাম তা শরাঘাতে ছেদন করলেন। তার পর তিনি তাঁর তূণ থেকে এক উত্তম শর তুলে নিয়ে ব্রহ্মাস্ত্রমন্ত্রে প্রভাবান্বিত করলেন এবং জ্যাকর্ষণ ক’রে মোচন করলেন। সেই শরের আঘাতে রাবণের দেহ অশ্ব রথ ও সারথি প্রজজ্জ্বলিত হয়ে উঠল, রাবণের ভস্ম পর্যন্ত রইল না।