পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৫১

 রাবণবধের পর রাম বিভীষণকে লঙ্কারাজ্য দান করলেন। অনন্তর বৃদ্ধ মন্ত্রী অবিন্ধ্য বিভীষণের সঙ্গে সীতাকে নিয়ে রামের কাছে এসে বললেন, সুচরিত্রা দেবী জানকীকে গ্রহণ করুন। বাষ্পাকুলনয়না শোকার্তা সীতাকে রাম বললেন, বৈদেহী, আমার যা কর্তব্য তা করেছি। আমি তোমার পতি থাকতে তুমি রাক্ষসগৃহে বার্ধক্যদশা পাবে তা হ’তে পারে না, এই কারণেই আমি রাবণকে বধ করেছি। আমার ন্যায় ধর্মজ্ঞ লোক পরহস্তগতা নারীকে ক্ষণকালের জন্যও নিতে পারে না। তুমি সচ্চরিত্রা বা অসচ্চরিত্রা যাই হও, কুক্কুরভুক্ত হবির ন্যায় তোমাকে আমি ভোগের জন্য নিতে পারি না।

 এই দারুণ বাক্য শুনে সীতা ছিন্ন কদলীতরুর ন্যায় ভূপতিত হলেন। এই সময়ে ব্রহ্মা ইন্দ্র অগ্নি বায়ু প্রভৃতি দেবগণ, সপ্তর্ষিগণ, এবং দিব্যমূর্তি রাজা দশরথ হংসযুক্ত বিমানে এসে দর্শন দিলেন। সীতা রামকে বললেন, রাজপুত্র, তোমার উপর আমার ক্রোধ নেই, স্ত্রীপুরুষের গতি আমার জানা আছে। যদি আমি পাপ ক’রে থাকি তবে আমার অন্তশ্চর প্রাণবায়ু আমাকে ত্যাগ করুন। যদি আমি স্বপ্নেও অন্য পুরুষকে চিন্তা না ক’রে থাকি তবে বিধাতার নির্দেশে তুমিই আমার পতি থাক। তখন দেবতারা রামকে বললেন, অতি সূক্ষ্ম পাপও মৈথিলীর নেই, তুমি এঁকে গ্রহণ কর। দশরথ বললেন, বৎস, তোমার মঙ্গল হক, চতুর্দশ বর্ষ পূর্ণ হয়েছে, তুমি অযোধ্যায় গিয়ে রাজ্যশাসন কর।

 মৃত বানরগণ দেবগণের বরে পুনর্জীবিত হ’ল। সীতা হনুমানকে বর দিলেন, পুত্র, রামের কীর্তি যত দিন থাকবে তুমিও তত দিন বাঁচবে, দিব্য ভোগ্যবস্তু সর্বদাই তোমার নিকট উপস্থিত হবে। তার পর রাম সীতার সঙ্গে পুষ্পক বিমানে কিষ্কিন্ধ্যায় ফিরে এলেন এবং অঙ্গদকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত ক’রে সুগ্রীবাদির সঙ্গে অযোধ্যায় যাত্রা করলেন। নন্দিগ্রামে এলে ভরত তাঁকে রাজ্যের ভার প্রত্যর্পণ করলেন। শুভনক্ষত্রযোগে বশিষ্ঠ ও বামদেব রামকে রাজপদে অভিষিক্ত করলেন। সুগ্রীব বিভীষণ প্রভৃতি স্বরাজ্যে ফিরে গেলেন। রাম গোমতীতীরে মহাসমারোহে দশ অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করলেন।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে মার্কণ্ডেয় বললেন, বনবাসকালে রাম এইপ্রকার দারুণ বিপদ ভোগ করেছিলেন। যুধিষ্ঠির, তুমি শোক ক’রো না, তোমার বীর দ্রাতাদের সাহায্যে তুমিও শত্রুজয় করবে।