পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২৫৭

বললেন, বলবীর্যশালী শতপুত্র তোমাকে আনন্দিত করবে। রাজকন্যা, দূর পথে এসেছ, ফিরে যাও।

 সাবিত্রী বললেন, সাধুজন সর্বদাই ধর্মপথে থাকেন, তাঁরা দান ক’রে অনুতপ্ত হন না। তাঁদের অনুগ্রহ ব্যর্থ হয় না, তাঁদের কাছে কারও প্রার্থনা বা সম্মান নষ্ট হয় না, তাঁরা সকলেরই রক্ষক। যম বললেন, তোমার ধর্মসম্মত হৃদয়গ্রাহী বাক্য শুনে তোমার প্রতি আমার ভক্তি হয়েছে। পতিব্রতা, তুমি আর একটি বর চাও।

 সাবিত্রী বললেন, হে মানদ, যে বর আমাকে দিয়েছেন তা আমার পুণ্য না থাকলে আপনি দিতেন না। সেই পুণ্যবলে এই বর চাচ্ছি—সত্যবান জীবন লাভ করুন, পতি বিনা আমি মৃততুল্য হয়ে আছি। পতিহীন হয়ে আমি সুখ চাই না, স্বর্গ চাই না, প্রিয়বস্তু চাই না, বাঁচতেও চাই না। আপনি শতপুত্রের বর দিয়েছেন, অথচ আমার পতিকে হরণ ক’রে নিয়ে যাচ্ছেন। সত্যবান বেঁচে উঠুন এই বর চাচ্ছি, তাতে আপনার বাক্য সত্য হবে। ধর্মরাজ যম বললেন, তাই হবে। সত্যবানকে পাশমুক্ত ক’রে যম হৃষ্টচিত্তে বললেন, তোমার পতিকে মুক্তি দিলাম, ইনি নীরোগ বলবান ও সফলকাম হবেন, চার শত বৎসর তোমার সঙ্গে জীবিত থাকবেন, যজ্ঞ ও ধর্মকার্য ক’রে খ্যাতিলাভ করবেন।

 যম চ’লে গেলে সাবিত্রী তাঁর স্বামীর মৃতদেহের নিকট ফিরে এলেন। তিনি সত্যবানের মাথা কোলে তুলে নিয়ে বললেন, রাজপুত্র, তুমি বিশ্রাম করেছ, তোমার নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে, যদি পার তো ওঠ। দেখ, রাত্রি গাঢ় হয়েছে। সত্যবান সংজ্ঞালাভ ক’রে চারিদিকে চেয়ে দেখলেন, তার পর বললেন, আমি শিরঃপীড়ায় কাতর হয়ে তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তুমি আমাকে আলিঙ্গন করে ধরে ছিলে। আমি নিদ্রাবস্থায় ঘোর অন্ধকার এবং এক মহাতেজা পুরুষকে দেখেছি। একি স্বপ্ন না সত্য? সাবিত্রী বললেন, কাল তোমাকে বলব। এখন রাত্রি গভীর হয়েছে, ওঠ, পিতা-মাতার কাছে চল। সত্যবান বললেন, এই ভয়ানক বনে নিবিড় অন্ধকারে পথ দেখতে পাবে না। সাবিত্রী বললেন, এই বনে একটি গাছ জ্বলছে, তা থেকে আগুন এনে আমাদের চারিদিকে জ্বালব, কাঠ আমাদের কাছেই আছে। তোমাকে রুগ্নের ন্যায় দেখাচ্ছে, যদি যেতে না পার তবে আমরা এখানেই রাত্রিযাপন করব। সত্যবান বললেন, আমি সুস্থ হয়েছি, ফিরে যেতে ইচ্ছা করি। দিনমানেও যদি আমি আশ্রমের বাইরে যাই তবে পিতা-মাতা উদ্‌বিগ্ন হয়ে আমার অন্বেষণ করেন, বিলম্বের জন্য ভর্ৎসনা করেন। আজ তাঁদের কি অবস্থা হয়েছে তাই আমি ভাবছি।