পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৮
মহাভারত

 সত্যবান শোকার্ত হয়ে কাঁদতে লাগলেন। সাবিত্রী তাঁর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন, যদি আমি তপস্যা দান ও হোম ক’রে থাকি তবে এই রাত্রি আমার শ্বশুর শাশুড়ী আর স্বামীর পক্ষে শুভ হ’ক। সাবিত্রী তাঁর কেশপাশ সংযত ক’রে দুই বাহু দিয়ে স্বামীকে তুললেন। সত্যবান তাঁর ফলের থলির দিকে তাকাচ্ছেন দেখে সাবিত্রী বললেন, কাল নিয়ে যেয়ো, তোমার কুঠার আমি নিচ্ছি। ফলের থলি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখে কুঠার নিয়ে সাবিত্রী সত্যবানের কাছে এলেন এবং তাঁর বাঁ হাত নিজের কাঁধে রেখে নিজের ডান হাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে চললেন। সত্যবান বললেন, এই পলাশবনের উত্তর দিকের পথ দিয়ে দ্রুত চল, আমি এখন সুস্থ হয়েছি, পিতামাতাকে শীঘ্র দেখতে চাই।

 এই সময়ে দ্যুমৎসেন চক্ষু লাভ করলেন। সত্যবান না আসায় তিনি উদ্‌বিগ্ন হয়ে তাঁর ভার্যা শৈবার সঙ্গে চারিদিকে উন্মত্তের ন্যায় খুঁজতে লাগলেন। আশ্রমবাসী ঋষিরা তাঁদের ফিরিয়ে এনে নানাপ্রকারে আশ্বাস দিলেন। এমন সময় সাবিত্রী সত্যবানকে নিয়ে আশ্রমে উপস্থিত হলেন। তখন ব্রাহ্মণেরা আগুন জ্বাললেন এবং শৈব্যা সত্যবান ও সাবিত্রীর সঙ্গে সকলে রাজা দ্যুমৎসেনের নিকটে বসলেন। সত্যবান জানালেন যে তিনি শিরঃপীড়ায় কাতর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সেজন্য ফিরতে বিলম্ব হয়েছে। গৌতম নামে এক ঋষি বললেন, তোমার পিতা অকস্মাৎ চক্ষু লাভ করেছেন, তুমি এর কারণ জান না। সাবিত্রী, তুমি বলতে পারবে, তুমি সবই জান, তোমাকে ভগবতী সাবিত্রী দেবীর ন্যায় শক্তিমতী মনে করি। যদি গোপনীয় না হয় তো বল।

 সাবিত্রী বললেন, নারদের কাছে শুনেছিলাম যে, আমার পতির মৃত্যু হবে। আজ সেই দিন, সেজন্য আমি পতির সঙ্গ ছাড়ি নি। তার পর সাবিত্রী যমের আগমন, সত্যবানকে গ্রহণ, এবং স্তবে প্রসন্ন হয়ে পাঁচটি বরদান প্রভৃতি সমস্ত ঘটনা বিবৃত করলেন। ঋষিরা বললেন, সাধ্বী, তুমি সুশীলা পণ্যবতী সদ্‌বংশীয়া; তমোময় হ্রদে নিমজ্জমান বিপদ্‌গ্রস্ত রাজবংশকে তুমি উদ্ধার করেছ। তার পর তাঁরা সাবিত্রীর বহু প্রশংসা ও সম্মাননা ক’রে হষ্টচিত্তে নিজ নিজ গৃহে চ’লে গেলেন।

 পরদিন প্রভাতকালে শাল্বদেশের প্রজারা এসে দ্যুমৎসেনকে জানালে যে তাঁর মন্ত্রী তাঁর শত্রুকে বিনষ্ট করেছেন এবং রাজাকে নিয়ে যাবার জন্য চতুরঙ্গ সৈন্য উপস্থিত হয়েছে। দ্যুমৎসেন তাঁর মহিষী, পুত্র ও পুত্রবধূর সঙ্গে নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন এবং সত্যবানকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। যথাকালে সাবিত্রীর শত পুত্র হ’ল এবং অশ্বপতির ঔরসে মালবীর গর্ভে সাবিত্রীর এক শত ভ্রাতাও হ’ল।