পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৬
মহাভারত

করবেন না। এই ব’লে তিনি দ্রৌপদীকে একটি ঢাকনিযুক্ত স্বর্ণময় পানপাত্র দিলেন।

 দ্রৌপদী শঙ্কিতমনে সরোদনে কীচকের আবাসে গেলেন এবং ক্ষণকাল সূর্যের আরাধনা করলেন। সূর্যের আদেশে এক রাক্ষস অদৃশ্যভাবে দ্রৌপদীকে রক্ষা করতে লাগল।

৬। কীচকের পদাঘাত

 দ্রৌপদীকে দেখে কীচক আনন্দে ব্যস্ত হয়ে উঠে বললেন, সুকেশী, আজ আমার সুপ্রভাত, তুমি আমার অধীশ্বরী, তোমাকে সুবর্ণহার শাঁখা কুণ্ডল কেয়ূর মণিরত্ন ও কৌষেয় বস্ত্রাদি দেব। তোমার জন্য দিব্য শয্যা প্রস্তুত আছে, সেখানে চল, আমার সঙ্গে মধুমাধবী (মধুগ্ধজাত মদ্য) পান কর। দ্রৌপদী বললেন, রাজমহিষী আমাকে সুরা আনবার জন্য পাঠিয়েছেন। কীচক বললেন, দাসীরা তা নিয়ে যাবে। এই ব’লে তিনি দ্রৌপদীর হাত এবং উত্তরীয় বস্ত্র ধরলেন, দ্রৌপদী ঠেলা দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দিলেন। কীচক সবলে আবার ধরলেন, দ্রৌপদী কম্পিতদেহে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে প্রবল ধাক্কা দিলেন, পাপাত্মা কীচক ভূমিতে প’ড়ে গেলেন। দ্রৌপদী দ্রুতবেগে বিরাট রাজার সভায় এলেন, কীচক সঙ্গে সঙ্গে এসে রাজার সমক্ষেই দ্রৌপদীর কেশাকর্ষণ ক’রে তাঁকে পদাঘাত করলেন। তখন সেই সূর্যনিযুক্ত রাক্ষস বায়ুবেগে ধাবিত হয়ে কীচককে আঘাত করলে, কীচক ঘুরতে ঘুরতে ছিন্নমূল বৃক্ষের ন্যায় ভূপতিত হলেন।

 রাজসভায় যুধিষ্ঠির ও ভীম উপস্থিত ছিলেন। দ্রৌপদীর অপমান দেখে কীচককে বধ করবার ইচ্ছায় ভীম দন্তে দন্ত ঘর্ষণ করতে লাগলেন। পাছে লোকে তাঁদের জেনে ফেলে এই ভয়ে যুধিষ্ঠির নিজের অঙ্গুষ্ঠ ভীমের অঙ্গুষ্ঠে ঠেকিয়ে তাঁকে নিবারণ করলেন। দ্রৌপদী তাঁদের দিকে একবার দৃষ্টিপাত ক’রে রুদ্রনয়নে বিরাট রাজাকে যেন দগ্ধ করে বললেন, যাঁদের শত্রু বহুদূরদেশে বাস ক’রেও ভয়ে নিদ্রা যায় না, তাঁদেরই আমি মানিনী ভার্যা, সেই আমাকে সূতপুত্র পদাঘাত করেছে! যাঁরা শরণাপন্নকে রক্ষা করেন সেই মহারথগণ আজ কোথায় আছেন? বিরাট যদি কীচককে ক্ষমা ক’রে ধর্ম নষ্ট করেন তবে আমি কি করতে পারি? রাজা আপনি কীচকের প্রতি রাজবৎ আচরণ করছেন না, আপনার ধর্ম দস্যুর ধর্ম, তা এই