পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯০
মহাভারত

শমীবৃক্ষ প্রদক্ষিণ করে অর্জুন রথারোহণে উত্তর দিকে অগ্রসর হলেন। তাঁর মহাশঙ্খের শব্দ শুনে রথের অশ্বসকল নতজানু হয়ে বসে পড়ল, উত্তরও সন্ত্রস্ত হলেন। অর্জুন রশ্মি টেনে অশ্বদের ওঠালেন এবং উত্তরকে আলিঙ্গন ক’রে আশ্বস্ত করলেন।

 অর্জুনের রথের শব্দ শুনে এবং নানাপ্রকার দুর্লক্ষণ দেখে দ্রোণ বললেন, দুর্যোধন, আজ তোমার সৈন্যদল অর্জুনের বাণে প্রপ্রীড়িত হবে, তারা যেন এখনই পরাভূত হয়েছে, কেউ যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করছে না, বহু যোদ্ধার মুখ বিবর্ণ দেখছি। তুমি গরুগুলিকে নিজ রাজ্যে পাঠিয়ে দাও, আমরা ব্যূহ রচনা ক’রে যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করি।

 দুর্যোধন বললেন, দ্যূতসভায় এই পণ ছিল যে পরাজিত পক্ষ বার বৎসর বনবাস এবং এক বৎসর অজ্ঞাতবাস করবে। এখনও তের বৎসর পূর্ণ হয় নি অথচ অর্জুন উপস্থিত হয়েছে, অতএব পাণ্ডবদের আবার বার বৎসর বনবাস করতে হবে। হয়তো লোভের বশে পাণ্ডবরা তাদের ভ্রম বুঝতে পারে নি। অজ্ঞাতবাসের কিছুদিন এখনও অবশিষ্ট আছে কিনা অথবা পূর্ণকাল অতিক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পিতামহ ভীষ্ম বলতে পারেন। ত্রিগর্ত সেনা সপ্তমীর দিন অপরাহ্নে গোধন হরণ করবে এই স্থির ছিল। হয়তো তারা তা করেছে, অথবা পরাজিত হয়ে বিরাটের সঙ্গে সন্ধি করেছে। যে লোক আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসছে সে বোধ হয় বিরাটের কোনও যোদ্ধা কিংবা স্বয়ং বিরাট। বিরাট বা অর্জুন যিনিই আসুন, আমরা যুদ্ধ করব। আচার্য দ্রোণ আমাদের সৈন্যের পশ্চাতে থাকুন, ইনি আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন আর অর্জুনের প্রশংসা করছেন। আচার্যরা দয়ালু হন, সর্বদাই বিপদের আশঙ্কা করেন। এঁরা রাজভবনে আর যজ্ঞসভাতেই শোভা পান, লোকসভায় বিচিত্র কথা বলতে পারেন; পরের ছিদ্র অন্বেষণে, মানুষের চরিত্র বিচারে এবং খাদ্যের দোষগুণ নির্ণয়ে এঁরা নিপুণ। এই পণ্ডিতদের পশ্চাতে রেখে আপনারা শত্রুবধের উপায় স্থির করুন।

 কর্ণ বললেন, মৎস্যরাজ বা অর্জুন যিনিই আসনে আমি শরাঘাতে নিরস্ত করব। জামদগ্ন্য পরশুরামের কাছে যে অস্ত্র পেয়েছি তার দ্বারা এবং নিজের বলে আমি ইন্দ্রের সঙ্গেও যুদ্ধ করতে পারি। অর্জুনের ধ্বজস্থিত বানর আজ আমার ভল্লের আঘাতে নিহত হবে, ভূতগণ আর্তনাদ ক’রে পালাবে। আজ অর্জুনকে রথ থেকে নিপাতিত ক’রে আমি দুর্যোধনের হৃদয়ের শল্য সমূলে উৎপাটিত করব।

 কৃপ বললেন, রাধেয়, তুমি নিষ্ঠুরপ্রকৃতি, সর্বদাই যুদ্ধ করতে চাও, তার