পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৯১

ফল কি হবে তা ভাব না। শাস্ত্রে অনেক প্রকার নীতির উল্লেখ আছে, তার মধ্যে যুদ্ধকেই প্রাচীন পণ্ডিতগণ সর্বাপেক্ষা পাপজনক বলেছেন। দেশ কাল যদি অনুকূল হয় তবেই বিক্রমপ্রকাশ বিধেয়। অর্জুনের সঙ্গে এখন আমাদের যুদ্ধ করা উচিত নয়। কর্ণ, অর্জুন যেসকল কর্ম করেছেন তার তুল্য তুমি কি করেছ? আমরা প্রতারণা ক’রে তাঁকে তের বৎসর নির্বাসনে রেখেছি, সেই সিংহ এখন পাশমুক্ত হয়েছে, সে কি আমাদের শেষ করবে না? আমরা সকলে মিলিত হয়ে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু কর্ণ, তুমি একাকী সাহস ক’রো না।

 অশ্বত্থামা বললেন, কর্ণ, আমরা গোহরণ ক’রে এখনও মৎস্যরাজ্যের সীমা পার হই নি, হস্তিনাপুরেও যাই নি, অথচ তুমি গর্বপ্রকাশ করছ। তোমার প্ররোচনায় দুর্যোধন পাণ্ডবদের সম্পত্তি হরণ করেছে, কিন্তু তুমি কি কখনও দ্বৈরথযুদ্ধে তাঁদের একজনকেও জয় করেছ? কোন্ যুদ্ধে তুমি কৃষ্ণাকে জয় করেছ—তোমার প্ররোচনায় যাঁকে একবস্ত্রে রজস্বলা অবস্থায় সভায় আনা হয়েছিল? মানুষ এবং কীট-পিপীলিকাদি পর্যন্ত সকল প্রাণীই যথাশক্তি ক্ষমা করে, কিন্তু দ্রৌপদীকে যে কষ্ট দেওয়া হয়েছে তার ক্ষমা পাণ্ডবগণ কখনই করবেন না। ধর্মজ্ঞরা বলেন, শিষ্য পুত্রের চেয়ে কম নয়, এই কারণেই অর্জুন আমার পিতা দ্রোণের প্রিয়। দুর্যোধন, তোমার জন্যই দ্যূতক্রীড়া হয়েছিল, তুমিই দ্রৌপদীকে সভায় আনিয়েছিলে, ইন্দ্রপ্রস্থরাজ্য তুমিই হরণ করেছ, এখন তুমিই অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ কর। তোমার মাতুল ক্ষত্রধর্মবিশারদ দুষ্টদ্যূতকার এই শকুনিও যুদ্ধ করুন। কিন্তু জেনো, অর্জুনের গাণ্ডীব অক্ষক্ষেপণ করে না, তীক্ষ্ণ নিশ্চিত বাণই ক্ষেপণ করে, আর সেইসকল বাণ মধ্যপথে থেমে যায় না। আচার্য (দ্রোণ) যদি ইচ্ছা করেন তো যুদ্ধ করুন, আমি ধনঞ্জয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করব না। যদি মৎস্যরাজ এখানে আসতেন তবে তাঁর সঙ্গে আমি যুদ্ধ করতাম।

 ভীষ্ম বললেন, আচার্যপুত্র (অশ্বত্থামা), কর্ণ যা বলেছেন, তার উদ্দেশ্য তোমাকে যুদ্ধে উত্তেজিত করা। তুমি ক্ষমা কর, এ সময়ে নিজেদের মধ্যে ভেদ হওয়া ভাল নয়, আমাদের মিলিত হয়েই যুদ্ধ করতে হবে।

 অশ্বত্থামা বললেন, গুরুদেব (দ্রোণ) কারও উপর আক্রোশের বশে অর্জুনের প্রশংসা করেন নি,

শত্রোরপি গুণা বাচ্যা দোষা বাচ্যা গুরোরপি।
সর্বথা সর্বযত্নেন পুত্রে শিষ্যে হিতং বদেৎ॥