পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩২
মহাভারত

কিছুক্ষণ আলাপের পর কৃষ্ণ বিদুরের ভবনে গেলেন এবং অপরাহ্ণে পিতৃষ্বসা কুন্তীর সঙ্গে দেখা করলেন।

১২। কুন্তী, দুর্যোধন ও বিদুরের গৃহে কৃষ্ণ

 কৃষ্ণের কণ্ঠ আলিঙ্গন ক’রে কুন্তী সরোদনে বললেন, বৎস, আমার পুত্রেরা বাল্যকালেই পিতৃহীন হয়েছিল, আমিই তাদের পালন করেছিলাম। পূর্বে যারা বহু ঐশ্বর্যের মধ্যে সুখে বাস করত তারা কি করে বনবাসের কষ্ট সইল? ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির ও মহাবল ভীমার্জুন কেমন আছে? জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার বশবর্তী আমার সেবাকারী বীর সহদেব কেমন আছে? যাকে আমি নিমেষমাত্র না দেখে থাকতে পারতাম না সেই নকুল কেমন আছে? যিনি আমার সকল পুত্র অপেক্ষা প্রিয়, যিনি কুরসভায় নিগৃহীত হয়েছিলেন, সেই কল্যাণী দ্রৌপদী কেমন আছেন? আমি দুর্যোধনের দোষ দিচ্ছি না, নিজের পিতারই নিন্দা করি। বাল্যকালে যখন আমি কন্দুক নিয়ে খেলতাম তখন তিনি কেন আমাকে কুন্তিভোজের[১] হাতে দিয়েছিলেন? আমি পিতা ও ভাশুর ধৃতরাষ্ট্র কর্তৃক বঞ্চিত হয়েছি, আমার বেঁচে লাভ কি? অর্জুনের জন্মকালে দৈববাণী হয়েছিল—এই পুত্র পৃথিবীজয়ী হবে, এর যশ স্বর্গ স্পর্শ করবে। কৃষ্ণ, যদি ধর্ম থাকেন তবে যাতে সেই দৈববাণী সফল হয় তার চেষ্টা করো। ধনঞ্জয় আর বৃকোদরকে ব’লো, ক্ষত্রিয় নারী যে নিমিত্ত পুত্র প্রসব করে তার কাল উপস্থিত হয়েছে। এই কাল যদি বৃথা অতিক্রম কর তবে তা অতি অশভকর কর্ম হবে। উপযুক্ত কাল সমাগত হ’লে জীবনত্যাগও করতে হয়, তোমরা যদি নীচ কর্ম কর তবে চিরকালের জন্য আমি তোমাদের ত্যাগ করব। নকুল-সহদেবকে ব’লো, তোমরা বিক্রমার্জিত সম্পদ ভোগ কর, প্রাণের মায়া ক’রো না। অর্জুনকে ব’লো, তুমি দ্রৌপদীর নির্দিষ্ট পথে চলবে।

 কুন্তীকে সান্ত্বনা দিয়ে কৃষ্ণ বললেন, আপনার ন্যায় মহীয়সী কে আছেন? হংসী যেমন এক হ্রদ থেকে অন্য হ্রদে আসে সেইরূপ আপনার পিতা শূরের[২] বংশ থেকে আপনি কুন্তিভোজের বংশে এসেছেন। আপনি বীরপত্নী, বীরজননী। শীঘ্রই পুত্রদের নীরোগ কৃতকার্য হতশত্রু, রাজশ্রীসমন্বিত ও পৃথিবীর অধিপতি দেখবেন।

 কুন্তীর নিকট বিদায় নিয়ে কৃষ্ণ দুর্যোধনের গৃহে গেলেন। সেখানে

  1. আদিপর্ব ১৯-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।
  2. শূর—বসুদেবের পিতা।