পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৩৩

দুঃশাসন কর্ণ শকুনি এবং নানা দেশের রাজারা ছিলেন। সংবর্ধনার পর কৃষ্ণ আসনে উপবিষ্ট হ’লে দুর্যোধন তাঁকে ভোজনের অনুরোধ করলেন, কিন্তু কৃষ্ণ সম্মত হলেন না। দুর্যোধন বললেন, জনার্দন, তোমার জন্য যে খাদ্য পানীয় বসন ও শয্যার আয়োজন করা হয়েছে তা তুমি নিলে না কেন? তুমি কুরুপাণ্ডব দুই পক্ষেরই হিতাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়, রাজা ধৃতরাষ্ট্রের প্রিয়, তথাপি আমাদের আতিথ্য প্রত্যাখ্যান করলে এর কারণ কি?

 কৃষ্ণ তাঁর বিশাল বাহু তুলে মেঘগম্ভীর স্বরে বললেন, ভরতবংশধর, দূত কৃতকার্য হ’লেই ভোজন ও পূজা গ্রহণ করে। দুর্যোধন বললেন, এমন কথা বলা তোমার উচিত নয়, তুমি কৃতকার্য বা অকৃতকার্য যাই হও আমরা তোমাকে পূজা করবার জন্য আগ্রহান্বিত হয়ে আছি, তোমার সঙ্গে আমাদের শত্রুতা বা কলহ নেই, তবে আপত্তি করছ কেন? ঈষৎ হাস্য ক’রে কৃষ্ণ বললেন, সম্প্রীতি থাকলে অথবা বিপদে পড়লে পরের অন্ন খাওয়া যায়। রাজা, তুমি আমাদের উপর প্রীত নও, আমি বিপদেও পড়ি নি। শত্রুর অন্ন খাওয়া অনুচিত, তাকে অন্ন দেওয়াও অনুচিত। তুমি পাণ্ডবদের বিদ্বেষ কর, কিন্তু তাঁরা আমার প্রাণস্বরূপ। যে পাণ্ডবদের শত্রুতা করে সে আমারও করে, যে তাঁদের অনুকূল সে আমারও অনুকূল। দুরভিসন্ধির জন্য তোমার অন্ন দুষিত, তা আমার গ্রহণীয় নয়, আমি কেবল বিদুরের অন্নই খেতে পারি।

 তার পর কৃষ্ণ বিদুরের গৃহে গেলেন। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ প্রভৃতি সেখানে গিয়ে বললেন, কৃষ্ণ, তোমার বাসের জন্য সুসজ্জিত বহু গৃহ নিবেদন করছি। কৃষ্ণ বললেন, আপনাদের আগমনেই আমি সৎকৃত হয়েছি। ভীষ্মাদি চ’লে গেলে বিদুর বিবিধ পবিত্র ও উপাদেয় খাদ্যপানীয় এনে বললেন, গোবিন্দ, এতেই তুষ্ট হও, তোমার যোগ্য সমাদর কে করতে পারে? ব্রাহ্মণগণকে নিবেদনের পর কৃষ্ণ তাঁর অনুচরদের সঙ্গে বিদুরের অন্ন ভোজন করলেন।

 রাত্রিকালে বিদুর বললেন, কেশব, এখানে আসা তোমার উচিত হয় নি। দুর্যোধন অধার্মিক ক্রোধী দুর্বিনীত ও মূর্খ। সে ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ প্রভৃতির ভরসায় এবং বহু সেনা সংগ্রহ করে নিজেকে অজেয় মনে করে। যার হিতাহিত জ্ঞান নেই তাকে কিছু বলা বধিরের নিকট গান গাওয়ার সমান। দুর্যোধন তোমার কথা গ্রাহ্য করবে না। নানা দেশের রাজারা সসৈন্যে কৌরবপক্ষে যোগ দিয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে পূর্বে তোমার শত্রুতা ছিল, যাঁদের ধন তুমি হরণ করেছ, তাঁরা সকলেই এখানে এসেছেন। কৌরবসভায় এইসকল শত্রুদের মধ্যে তুমি কি ক’রে যাবে? মাধব,