পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৬
মহাভারত

 যুধিষ্ঠির দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ ক’রে বললেন, যে অনর্ধ নিবারণের জন্য আমি বনবাস স্বীকার ক’রে বহু দঃখ পেয়েছি, সেই মহা অনর্থই উপস্থিত হ’ল। যাঁরা অবধ্য তাঁদের সঙ্গে কি ক’রে যুদ্ধ করব? গুরুজন ও বৃদ্ধদের হত্যা ক’রে আমাদের কিরূপে বিজয়লাভ হবে? অর্জুন বললেন, মহারাজ, কৃষ্ণ কুন্তী ও বিদুর কখনও অধর্ম করতে বলবেন না; যুদ্ধ না করে ফিরে যাওয়া আপনার অকর্তব্য। ঈষৎ হাস্য ক’রে কৃষ্ণ বললেন, ঠিক কথা।

 দ্রুপদ বিরাট সাত্যকি ধৃষ্টদ্যুম্ন ধৃষ্টকেতু শিখণ্ডী ও মগধরাজ সহদেব—এই সাত জনকে যুধিষ্ঠির যথাবিধি অভিষিক্ত ক’রে সেনাপতির পদ দিলেন। তার পর তিনি ধৃষ্টদ্যুম্নকে সর্বসেনাপতি, অর্জুনকে সেনাপতিপতি, এবং কৃষ্ণকে অর্জুনের নিয়ন্তা ও অশ্বচালক নিযুক্ত করলেন।

২৩। বলরাম ও রুক্মী

 কুরুপাণ্ডবের ঘোর অনিষ্টকর যুদ্ধ আসন্ন হয়েছে এই সংবাদ পেয়ে অক্রূর উদ্ধব শাম্ব প্রদ্যুম্ন প্রভৃতির সঙ্গে হলায়ুধ বলরাম যুধিষ্ঠিরের ভবনে এলেন। তিনি কৈলাসশিখরের ন্যায় শুভ্রকান্তি, সিংহসখেলগতি[১], তাঁর চক্ষু মদ্যপানে আরক্ত, পরিধান নীল কৌষেয় বসন। তাঁকে দেখে সকলে সসম্মানে উঠে দাঁড়ালেন এবং যুধিষ্ঠির তাঁর কর গ্রহণ করলেন। অভিবাদনের পর সকলে উপবিষ্ট হ’লে বলরাম কৃষ্ণের দিকে চেয়ে বললেন, দৈববশে এই যে দারুণ লোকক্ষয়কর যুদ্ধ আসন্ন হয়েছে তার নিবারণ করা অসাধ্য। আমি এই কামনা করি যে আপনারা সকলে নীরোগে অক্ষতদেহে এই যুদ্ধ থেকে উত্তীর্ণ হবেন। মহারাজ যুধিষ্ঠির, আমি কৃষ্ণকে বহু বার বলেছি যে আমাদের কাছে পাণ্ডবরা যেমন দুর্যোধনও তেমন, অতএব তুমি দুর্যোধনকেও সাহায্য ক’রো। কিন্তু কৃষ্ণ আমার কথা শোনেন নি, অর্জুনের প্রতি স্নেহের বশে আপনার পক্ষেই সর্ব শক্তি নিয়োগ করেছেন, একারণে আপনারা অবশ্যই জয়লাভ করবেন। আমি কৃষ্ণকে ছেড়ে অন্য পক্ষে যেতে পারি না, অতএব কৃষ্ণের অভীষ্ট কার্যই করব। গদাযুদ্ধবিশারদ ভীম ও দুর্যোধন আমার শিষ্য, দুজনের উপরেই আমার সমান স্নেহ। কৌরবদের বিনাশ আমি দেখতে পারব না, সেজন্য সরস্বতী তীর্থে ভ্রমণ করতে যাচ্ছি।

  1. ক্রীড়ারত সিংহের ন্যায় যাঁর গতি।