পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩৫৭

 বলরাম চ’লে গেলে ভোজ ও দাক্ষিণাত্য দেশের অধিপতি ভীষ্মকের পুত্র রুক্মী এক অক্ষৌহিণী সেনা নিয়ে উপস্থিত হলেন। ইনি কিন্নরশ্রেষ্ঠ দ্রুমের কাছে ধনুর্বেদ শিখে বিজয় নামক ঐন্দ্রধনু লাভ করেছিলেন। এই ধনু অর্জুনের গাণ্ডীব ও কৃষ্ণের শার্ঙ্গ ধনুর তুল্য। কৃষ্ণ যখন রুক্মিণীহরণ করেন তখন তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে রুক্মী পরাজিত হন।

 যুধিষ্ঠির সসম্মানে রুক্মীর সংবর্ধনা করলেন। বিশ্রামের পর রুক্মী বললেন, অর্জুন, যদি ভয় পেয়ে থাক তবে এই যুদ্ধে আমি তোমার সহায় হব। আমার তুল্য বিক্রম কারও নেই, শত্রুসেনার যে অংশের সঙ্গে আমাকে যুদ্ধ করতে দেবে সেই অংশই আমি বিনষ্ট করব, দ্রোণ কৃপ ভীষ্ম কর্ণকেও আমি বধ করব। অথবা এই রাজারা সকলেই যুদ্ধে বিরত থাকুন, আমিই শত্রুসংহার ক’রে তোমাদের রাজ্য উদ্ধার করে দেব।

 অর্জুন রুক্মীকে সহাস্যে বললেন, কুরুকুলে আমার জন্ম, আমি পাণ্ডুর পুত্র, দ্রোণের শিষ্য, বাসুদেব আমার সহায়, আমি গাণ্ডীবধারী, কি ক’রে বলব যে ভয় পেয়েছি? আমি যখন ঘোষযাত্রায় মহাবল গন্ধর্বদের সঙ্গে, নিবাতকবচ ও কালকেয় দানবদের সঙ্গে, এবং বিরাটরাজ্যে বহু কৌরবের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলাম তখন কে আমার সহায় ছিল? আমি রুদ্র ইন্দ্র কুবের যম বরুণ অগ্নি কৃপ দ্রোণ ও মাধবের অনুগৃহীত; আমার তেজোময় দিব্য গাণ্ডীব ধনু, অক্ষয় তূণ ও বিবিধ দিব্যাস্ত্র আছে, ভয় পেয়েছি এই যশোনাশক বাক্য কি ক’রে বলব? মহাবাহু, আমি ভীত হই নি, আমার সহায়েরও প্রয়োজন নেই, তোমার ইচ্ছা হয় এখানে থাক, না হয় ফিরে যাও।

 রুক্মী তাঁর সাগরতুল্য বিশাল সেনা নিয়ে দুর্যোধনের কাছে গেলেন এবং অর্জুনকে যেমন বলেছিলেন সেইরূপই বললেন। বীরাভিমানী দুর্যোধনও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলেন। এইরূপে রোহিণীনন্দন বলরাম এবং ভীষ্মকপুত্র রুক্মী কুরুপাণ্ডবের যুদ্ধ থেকে দূরে রইলেন।

২৪। কৌরবযুদ্ধসজ্জা

 কৃষ্ণ হস্তিনাপুর থেকে চ’লে গেলে দুর্যোধন কর্ণ প্রভৃতিকে বললেন, বাসুদেব অকৃতকার্য হয়ে ফিরে গেছেন, তিনি নিশ্চয় ক্রুদ্ধ হয়ে পাণ্ডবগণকে যুদ্ধে উত্তেজিত করবেন। তিনি যুদ্ধই চান, ভীমার্জুনও তাঁর মতে চলেন। দ্রুপদ আর