পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৩৮১

অভিমূখে ত্বরান্বিত হয়ে তোমার দংষ্ট্রাকরাল ভয়ানক মুখসমূহে প্রবেশ করছে; কেউ বা চূর্ণিতমস্তকে তোমার দর্শনের অন্তরালে বিলগ্ন হয়ে দৃষ্ট হচ্ছে।—

যথা প্রদীপ্তং জ্বলনং পতঙ্গা
বিশন্তি নাশায় সমৃদ্ধবেগাঃ।
তথৈব নাশায় বিশন্তি লোকা-
স্তবাপি বক্ত্রাণি সমৃদ্ধবেগাঃ॥
লেলিহ্যসে গ্রসমানঃ সমন্তা-
ল্লোকান্ সমগ্রান্ বদনৈর্জ্বলদ্‌ভিঃ।
তেজোভিরাপূর্য জগৎ সমগ্রং
ভাসস্তবোগ্রাঃ প্রতপন্তি বিষ্ণো॥
আখ্যহি মে কো ভাবানুগ্ররূপো
নমোহস্তুতে দেববর প্রসীদ।
বিজ্ঞাতুমিচ্ছামি ভবন্তমাদ্যং
ন হি প্রজানামি তব প্রবৃত্তিম্॥

—পতঙ্গগণ যেমন নাশের জন্য সমৃদ্ধবেগে প্রদীপ্ত অনলে প্রবেশ করে সেইরূপ সর্বলোকও নাশের জন্য সমবেগে তোমার মুখসমূহে প্রবেশ করছে। তুমি জ্বলন্ত বদনে সর্বদিক থেকে সমগ্র লোক গ্রাস করতে করতে লেহন করছ; বিষ্ণু, তোমার উগ্র প্রভা সমস্ত জগৎ তেজে পূরিত ক’রে সন্তপ্ত করছে। বল, কে তুমি উগ্ররূপে? তোমাকে নমস্কার; হে দেবেশ, প্রসন্ন হও, আদিস্বরূপ তোমাকে জানতে ইচ্ছা করি; তোমার প্রবৃত্তি বুঝতে পারছি না।

 তখন ভগবান বললেন, আমি লোকক্ষয়কারী কাল। এখানে যে যোদ্ধারা সমবেত হয়েছে, তুমি না মারলেও তারা মরবে। আমি পূর্বেই তাদের মেরেছি; সব্যসাচী, তুমি নিমিত্তমাত্র হও। ওঠ, যশোলাভ কর, শত্রু জয় ক’রে সমৃদ্ধ রাজ্য ভোগ কর।

 অর্জুন বললেন, হে সর্ব, তোমাকে সহস্রবার সর্বদিকে নমস্কার করি। তোমার মহিমা না জেনে প্রমাদবশে বা প্রণয়বশে তোমাকে কৃষ্ণ যাদব ও সখা ব’লে সম্বোধন করেছি, বিহার ভোজন ও শয়ন কালে উপহাস করেছি, সে সমস্ত ক্ষমা কর। তোমার অদৃষ্টপূর্ব রূপ দেখে আমি রোমাঞ্চিত হয়েছি, ভয়ে আমার মন প্রব্যথিত হয়েছে, তুমি প্রসন্ন হও, পূর্বরূপ ধারণ কর।

 কৃষ্ণ তাঁর স্বাভাবিক রূপ গ্রহণ করলেন এবং আরও বহু উপদেশ দিয়ে