পরিশেষে বললেন, অর্জুন, যদি অহংকারবশে মনে কর যে যুদ্ধ করব না, তবে সে সংকল্প মিথ্যা হবে, তোমার প্রকৃতিই তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে। আমি করছি—এই ভাব যাঁর নেই তাঁর বুদ্ধি কর্মে আসক্ত হয় না, তিনি সর্বলোক হত্যা ক’রেও হত্যা করেন না। ঈশ্বর হৃদয়ে অধিষ্ঠান ক’রে সর্বভূতকে যন্ত্রারূঢ়ের ন্যায় চালিত করেন, তুমি সর্বভাবে তাঁর শরণ নাও।—
মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্যাজী মাং নমস্কুরু।
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োঽসি মে॥
সর্বধর্মান্ পরিত্যজা মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচ॥
—আমাতে চিত্ত অপর্ণ কর, আমার ভক্ত ও উপাসক হও, আমাকে নমস্কার কর; তুমি আমার প্রিয়, তোমার কাছে সত্য প্রতিজ্ঞা করছি—তুমি আমাকেই পাবে। সর্ব ধর্ম ত্যাগ ক’রে একমাত্র আমাকে শরণ ক’রে চল, আমি তোমাকে সর্ব পাপ থেকে মুক্ত করব, শোক ক’রো না।
অর্জুন বললেন, অচ্যুত, আমার মোহ বিনষ্ট হয়েছে, তোমার প্রসাদে আমি ধর্মজ্ঞান লাভ করেছি, আমার সন্দেহ দূর হয়েছে, তোমার আদেশ আমি পালন করব।
॥ ভীষ্মবধপর্বাধ্যায়॥
৬। যুধিষ্ঠিরের শিষ্টাচার ― কর্ণ ― যুযুৎসু
যুধিষ্ঠির দেখলেন, সাগরতুল্য দুই সেনা যুদ্ধের জন্য সমুদ্যত ও চঞ্চল হয়েছে। তিনি তাঁর বর্ম খুলে ফেলে অস্ত্র ত্যাগ ক’রে সত্বর রথ থেকে নামলেন এবং শত্রুসেনার ভিতর দিয়ে পদব্রজে কৃতাঞ্জলিপুটে ভীষ্মের অভিমুখে চললেন। তাঁকে এইরূপে যেতে দেখে তাঁর ভ্রাতারা, কৃষ্ণ, এবং প্রধান প্রধান রাজারা উৎকণ্ঠিত হয়ে তাঁর অনুসরণ করলেন। ভীমার্জুনাদি জিজ্ঞাসা করলেন, মহারাজ, আপনার অভিপ্রায় কি? আমাদের ত্যাগ করে নিরস্ত্র হয়ে একাকী শত্রুসেনার অভিমুখে কেন যাচ্ছেন? যুধিষ্ঠির উত্তর দিলেন না, যেতে লাগলেন। কৃষ্ণ সহাস্যে বললেন, আমি এঁর অভিপ্রায় বুঝেছি, ইনি ভীষ্মদ্রোণাদি গুরুজনকে সম্মান দেখিয়ে তার পর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন। শাস্ত্রে আছে, গুরুজনকে সম্মানিত ক’রে যুদ্ধ করলে নিশ্চয় জয়লাভ হয়, আমিও তাই মনে করি।