আংটির কথা ভাবলে তো তার এখন চলবে না। সামনে তার কত বড় বিপদ! একমাত্র নাগাই জানে গোয়ালঘরে কেন আগুন ধরেছিল, নাগা যদি যাদববাবুকে বলে দেয়! পরেশের ইচ্ছা হয়, গলা টিপে ঘুমন্ত ছোঁড়াটাকে মেরে ফেলে আংটিটা নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু হায় রে, ওকে গলা টিপে মারবার ক্ষমতা কি তার আছে! আগুন লাগার কথা কর্তাকে না বলার জন্য ওর হাতে পায়েই তাকে ধরতে হবে।
নাগার ঘুম ভাঙ্গাতে যাদববাবু সকলকে বারণ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু পরেশের উপায় ছিল না। ঠেলা দিয়ে সে নাগার ঘুম ভাঙ্গাবার চেষ্টা করে। সারারাত জেগে সে ঘুমিয়েছে, ঘুম কি সহজে তার ভাঙ্গে। ঘুম যখন ভাঙ্গল, তার রক্তবর্ণ চোখের চাউনি দেখে পরেশের বুক কেঁপে গেল।
‘আমারে বাঁচা নাগা, কর্তারে কইস্ না। কর্তা আমারে জিগাইছিল আগুন ক্যামনে লাগল, তরেও জিগাইবো। কইস্ না নাগা কর্তারে, টাকা দিমুনে তরে একটা।’
ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলেও নাগার হাসি পায়, কদিন আগে যখন হারু মাঝির কাছে একটি পয়সা চেয়ে সব সময় পেত না, পরেশের কথা শুনে তখনও হয়তো তার হাসি পেত।
‘কাঙাল পাইছ আমারে?’
‘আইচ্ছা, দুই টাকা দিমু।’
নাগা পাশ ফিরে শুয়ে বলল, ‘টাকা চাই না, পরেশ কাকা, কর্তা না জিগাইলে কমু না।’
পরেশ ব্যাকুল হয়ে বলল, ‘কিন্তু কর্তা যে তরে জিগাইবো, তর পায় ধরি নাগা—’
সটান উঠে বসে পা থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নাগা ধমক দিয়ে বলল, ‘কাণ্ডজ্ঞান নাই তোমার, কাকা কই না তোমারে? আইচ্ছা, নাম কমু না তোমার। আমি অখন ঘুমামু, আমারে জ্বালাইস না কইলাম।’
পরদিন একটু বেলায় নাগাকে বাদ দিয়ে যাদববাবু নৌকায় যাত্রা করলেন। আটখামারে দুপুরের স্টীমার ধরবেন, শহরে কাজ আছে।