পাতা:মাদল - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভূমিকা


 শ্রীযুক্ত চাঁদমলের ‘মাদল’ নামক পুস্তকের কতকগুলি কবিতা পড়িয়াছি। কবি একজন তরুণ যুবক-কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি, এ, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতেছেন। ইনি রাজপুতনার অন্তর্গত বিকানির জেলার রাজগড় পল্লীর অধিবাসী। ইঁহার পক্ষে বাঙ্গলায় কবিতা লেখার উদ্যম কতকটা সাহসিকতার পরিচায়ক, সন্দেহ নাই। কিন্তু ইঁহার ভাষা ও ছন্দে এমন একটা স্বাভাবিকত্ব আছে, যাহাতে লোকে ইঁহাকে সহজে বিদেশী বলিয়া ধরিতে পরিবে না। যে কবিতাগুলি পড়িয়াছি, তাহার মধ্যে একটিমাত্র শব্দ বাঙ্গলা অভিধানে নাই এবং উহা বাঙ্গালী পাঠকের অনধিগম্য। তের পৃষ্ঠার শেষ দিকে “মুর্ঝেছে” শব্দের অর্থ ‘শুকাইয়া পড়িয়াছে’, কিন্তু এটি হিন্দী শব্দ-বাঙ্গলায় বিদেশী শব্দের বিরুদ্ধে আমরা কখনই দ্বার বন্ধ করিয়া রাখি নাই, চলিত ভাষা সর্ব্বত্রই বিদেশী উপকরণে পুষ্ট হইয়া থাকে- তবে সেইরূপ উপকরণের আমদানী করিতে হইলে কতকটা নির্ব্বাচনী শক্তি প্রয়োগের দরকার। আমাদের তরুণ কবি এক স্থানে লিখিয়াছেন “রচিনু মরম-গীতি বিদেশী ভাষায়” কিন্তু তাঁহার বাঙ্গলা ভাষার বনিয়াদটি বেশ পাকা, তাহাতে বিদেশীয়ত্ব কিছু পাইতেছি না।

 তাঁহার কতকগুলি কবিতায় নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য-ফুল, লতা, নক্ষত্র প্রভৃতির বর্ণণা লইয়া একটু বেশী নড়াচাড়া করিয়াছেন; তরুণ কবিদের অনেকেই এইরূপ করিয়া থাকেন,—দোষ এই যে এই ধরণের কবিতায় বাক্যপল্লব একটু বেশী হইয়া পড়ে, এবং কবিতার ছাঁচটা একরূপ- এবং কতকটা একঘেয়ে হয়। কিন্তু এই কবি রবীন্দ্রবাবুর ‘কথার’ অনুকরণে যে কয়েকটি নাতিদীর্ঘ পল্লী-গল্প কাব্যছন্দে লিখিয়াছেন, তাহা পড়িয়া মনে হয়। বর্ণনামূলক কবিতা লিখিয়া ইনি প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পরিবেন। ইনি আমাকে জানাইয়াছেন, রাজপুতানার পল্লীগাথা যেগুলি প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা ছাড়াও চারণদিগের কাছে আরও শত শত অপ্রকাশিত পল্লী-গাথা আছে। ইনি সেইগুলি বাঙ্গলায় অনুবাদ করিবেন স্থির