পাতা:মাধবীকঙ্কণ - রমেশচন্দ্র দত্ত.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তীক্ষ্ণবুদ্ধি মহাযোদ্ধারও অধিক ক্ষতি করিতে পারিলেন না, ক্ষোভে রাজস্থানে প্রত্যাবর্তন করিলেন।

 সুজা প্রয়াগ হইতে পাটনা, পাটনা হইতে মুঙ্গের, মুঙ্গের হইতে রাজমহল এবং তথা হইতে গঙ্গা পার হইয়া তণ্ডায় পলায়ন করিলেন। আওরংজীবের পুত্র মহম্মদ এবং সেনাপতি আমীর জুমলা তাহার পশ্চাদ্ধাবন করিতেছিলেন। তণ্ডায় রাজপুত্র মহম্মদ, সুজার কন্যাকে বিবাহ করিয়া সুজার পক্ষাবলম্বন করিলেন; কিন্তু উভয়েই আমীর জুমলার নিকট পরাস্ত হইলেন। তৎপুরে মহম্মদ পিতার কপটপত্রে বিশ্বাস করিয়া সস্ত্রীক সুজার পক্ষ ত্যাগ করিলেন। অভাগা সুজা আরাকানে পলায়ন করিলেন। তথাকার রাজার সহিত বিরোধ হওয়ায় সুজা সসৈন্যে হত হইলেন, তাঁহার কন্যাকে রাজা বিবাহ করিলেন। কথিত আছে, সুজার রূপবতী সহধর্মিণী প্যারিবানু বিষাদে আত্মহত্যা করিলেন। যিনি বিংশতি বৎসর বঙ্গদেশ শাসন করিয়াছিলেন, যিনি যুদ্ধে সাহস, শাসনে দয়া ও হিন্দুদিগের প্রতি বদান্যতার জন্য খ্যাত হইয়াছিলেন, যাঁহার খাসমহলের প্রাসাদ মর্ত্যে ইন্দ্রপুরী ছিল ও দিবারাত্র আনন্দলহরীতে ভাসিতেন, তিনি মুত্যুকালে মস্তক রাখিবার স্থান পাইলেন না, বিদেশে শত্রুহস্তে সবংশে বিনষ্ট হইলেন।

 দারা শ্যামনগর অথবা ফতে-আবাদের বুকে পরাজয়ের পর সিন্ধুদেশে পলায়ন করিয়াছিলেন, আওরংজীবের সৈন্য তথা হইতে দারাকে দিল্লী হইয়া আইসে। নৃশংস সম্রাট জোষ্ঠকে যথেষ্ট অপমান করিয়া পরে হত্যা করেন। কারারুদ্ধ মোরাদও অচিরাৎ রাজাজ্ঞায় হত হইলেন। ভ্রাতৃরক্তে স্নাত হইয়া আওরংজীব ভারতবর্ষের রাজসিংহাসনে আরোহণ করিলেন।

 যেদিন মথুরায় হেমের সহিত নরেন্দ্রের সাক্ষাৎ হইয়াছিল, তাহার পর নরেন্দ্র নিরুদ্দেশ হইলেন।

 হেমলতা বঙ্গদেশে প্রত্যাবর্তন করিয়া নরেন্দ্রেরে অনেক অনুসন্ধান করাইলেন, মহানুভব শ্রীশচন্দ্র দেশে-দেশে সংবাদ পাঠাইলেন যে, নরেন্দ্র ফিরিয়া আসিলেই তাঁহাকে তাঁহার পৈতৃক জমিদারির অর্ধ-অংশ ছাডিয়া দিবেন; কিন্তু সেইদিনের পর নরেন্দ্রকে আর কেহ কোথাও দেখিতে পাইল না।

 হেমলতা বীরনগরে শ্রীশচন্দ্রের সহিত বাস করিতে লাগিলেন, মথুরা মন্দিরে যে অঙ্গীকার করিয়াছিলেন, হেম তাহা বিস্মৃত হয়েন নাই, পতিসেবায় ধর্মপরায়ণা হেমের অদ্য চিন্তা তিরোহিত হইল, পতিভক্তি ভিন্ন অন্য ধর্ম তিনি জানিতেন না। ক্রমে শ্রীশচন্দ্রের ঔরসে তাঁহার হেমন্তকুমারী ও সরযূবালা নামক দুইটি কন্যা ও প্রতাপ নামক একটি পুত্র জন্মিল। বিংশতি বৎসর পূর্বে শ্রীশ, নরেন্দ্র ও হেমলতা সায়ংকালে গঙ্গাতীরে

১০৩