পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

va অভিমানে শ্যামার কান্না আসে। অভিমানে কান্না আসিবার বয়স তাহার নয়, তবু মনের মধ্যে আজো যে অবুঝ কঁচা মেয়েটা লুকাইয়া আছে যে বাপের স্নেহ জানে নাই, অসময়ে মাকে হারাইয়াছে, ষোল বছর বয়স হইতে জগতে একমাত্র আপনার জন মামাকে খুজিয়া পায় নাই, স্বামীর ভয়ে দিশেহারা হইয়া থাকিয়াছে, সে যদি আজ কঁাদিতে চায় প্রৌঢ়া শ্যাম তাহাকে বারণ করিতে পরিবে কেন ? তাহারা বনৰ্গা পৌছিলে মন্দা শীতলকে দেখিয়া একটু কঁাদিল, তারপর তাড়াতাড়ি তার জন্য বিছানা পাতিয়া দিল, এদিক ওদিক ছুটিাছুটি করিয়া ভারি ব্যস্ত হইয়া পড়িল সে, সেবাযত্নের ব্যবস্থা করিল, ছেলেমেয়েদের সরাইয়া দিল, শ্যামাকে বলিতে লাগিল—ভেবো না তুমি বৌ, ভেবো না,-ফিরে যখন পেয়েছি দাদাকে ভাল করে আমি তুলিবই ! বকুল বিস্ফরিত চোখে শীতলকে খানিকক্ষণ চাহিয়া দেখিল, তারপর সে যে কোথায় গেল কেহ আর তাহাকে খুজিয়া পায় না। হারান ডাক্তারকেও নয়। কোথায় গেল দুজনে ? শেষে সুপ্ৰভাই তাদের আবিষ্কার করিল বাড়ির পিছনে ঢেকিঘরে। ওঘরে বকুল খেলাঘর পাতিয়াছে ? টেকিটার উপরে পাশাপাশি বসিযা গম্ভীর মুখে কি যে তাহারা আলোচনা করিতেছিল। তারাই জানে, সুপ্ৰভা দেখিয়া হাসিয়া বঁাচে না । ডাক্তার নাকি বুড়া ? জগতে এত জায়গা থাকিতে, কথা বলিবার এত লোক থাকিতে, বুড়া ঢেকিঘরে বসিয়া আলাপ করিতেছে বকুলের সঙ্গে ! —যা তো খোকা ডেকে আন ওদের । বুড়োকে বল মুখহাত ধুয়ে নিতে, --খেতে-টোতে দি ] তোর বাবা কি খাবে তাও তো বলে দিলে না, টেকি ঘরে গিয়ে বসে রয়েছে ? হারান আসে, মুখ হাত ধোয়, সুপ্ৰভা ঘোমটা টানিয়া তাহাকে জলখাবার দেয় । বকুল কিন্তু ঢেকিঘিরেই বসিয়া থাকে। সুপ্ৰভা গিয়া বলে-ও বুকু, খাবি নে তুই ? তোর বাবা এল, তুই এখেনে বসে আছিস ? -ও আমার বাবা নয় ! -শোন কথা মেয়ের -সুপ্ৰভ হাসে-আয়, চলে আয় আমার সঙ্গে, একলাটি এখানে তোকে বসে থাকতে হবে না। à 88