পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্রন্থাবলী রাত্রিটা এখানে থাকিয়া পরদিন সকালে হারান কলিকাতা চলিয়া গেল । শ্যামা সাবধান হইয়া গিয়াছিল, হারানকে অতিরিক্ত আত্মীয়তা জানাইবার কোনো চেষ্টাই সে করিল না। যাওয়ার সময় শুধু ঘটা করিয়া প্ৰণাম করিয়া বলিল-মেয়েকে ভুলবেন না বাবা । খুব ধীরে ধীরে শীতল আরোগ্যলাভ করিতে লাগিল। সে নিঝুম নিশ্চপ হইয়া গিয়াছে। আপনা হইতে কথা সে একেবারেই বলে না, অপরে বলিলে কখনো দু-এক কথায় জবাব দেয়, কখনো কিছু বলে না । কেহ কথা বলিলে বুঝিতে যেন তাহার দেরি হয়। ক্ষুধা তষষ্ণা বোধও যেন তাহার নাই, খাইতে দিলে খায়, না দিলে কখনো চায় না। চুপচাপ বিছানায় পড়িয়া থাকিয়া সে যে ভাবে তা তো নয়। এখানে আসিয়া ক’দিনের মধ্যে চোখ-ওঠা। তাহার সারিয়া গিয়াছে, সব সময় সে শূন্য দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। দু বছর জেল খাটিলে মানুষ কি এমনি হইয়া যায় ? কবে ছাড়া পাইয়াছিল শীতলা ? কলিকাতার বাড়িতে আসিয়াই সে তো ছিল দশ বারোদিন, তার আগে ? প্ৰথমে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া কিছু জানা যায় না। পরে অল্পে অল্পে জানা গিয়াছে, পনের কুড়ি দিন কোথায় কোথায় ঘরিয়া শীতল কলিকাতার বাড়িটাতে আশ্রয় লইয়াছিল। জানিয়া শ্যামার বড় অনুতাপ হইয়াছে। এই দারুণ শীতে একখানা আলোয়ান মাত্র সম্বল করিয়া স্বামী তাহার এক মাসের উপর কপর্দকহীন অবস্থায় যেখানে সেখানে কাটাইয়াছে। জেলে থাকিবার সময় শীতলের সঙ্গে সে যোগসূত্র রাখে নাই কেন ? তবে তো সময় মতো খবর পাইয়া ওকে সে জেলের দেউড়ি হইতে সোজা বাড়ি লইয়া আসিতে পারিত ? প্ৰাণ দিয়া শ্যামা শীতলের সেবা করে। শ্রান্তি নাই, শৈথিল্য নাই, অবহেলা নাই। চারিটি সন্তান শ্যামার ? আর একটি বাড়িয়াছে। শীতল তো এখন শিশু । পরীক্ষার ফল বাহির হইলে জানা গিয়াছে বিধান ক্লাশে উঠিয়াছে প্রথম হইয়া । YAR O