পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জননী বিধানের চাকরির কথা শোনায়, তার দুধের ছেলে নব্বই টাকার চাকরি যোগাড় করিয়াছে, কারে সাহায্য চায় নাই, কারো তোষামোদ করে নাই-বল তো বাছা এবার তাদের মুখ রইল কোথায় ছেলেকে আমার পড়ার খরচাটুকু পৰ্যন্ত যারা দিতে চায়নি ? কথাবার্তা শুনিয়া মনে হয় শ্যামা সত্যই বড় অকৃতজ্ঞ । এতগুলি বছর যার আশ্রয়ে সে থাকিয়ছে এখন ছেলের চাকরি হওয়ামাত্র নিন্দ আরম্ভ করিয়াছে তার। এরা যে কত করিয়াছে তার জন্য সব সে ভুলিয়া গিয়াছে, মনে রাখিয়াছে শুধু ত্রুটি-বিচূতি, অপমান অবহেলা । মন্দা রাগিয়া বলে,—ধন্যি তুমি বৌ, এতেও ছিল তোমার পেটে-পেটে ! এত যদি কষ্ট পেয়েছ তুমি এখানে থেকে, থাকলে কেন ? নিজের রাজ্যপাটে গিয়ে বসলে না কেন রাজরানী হয়ে ? আজি পাঁচ বছর তোমাদের পাঁচটি প্ৰাণীকে আমি পুষলাম, ছেলে পড়লাম, মেয়ের বিয়ে দিলাম তোমার, আজ দিন পেয়ে আমাদের তুমি শাপছা! অবাক হইয়া শুনিয়া শ্যামা কঁাদিতে কঁাদিতে বলে-না ঠাকুরবি, তোমাদের কিছু বলিনি তো আমি, কেন বলব তোমাদের ? কম করেছ। আমার তোমরা ! আমাকে কিনে রেখেছ ঠাকুর ঝি, তোমাদের ঋণ আমি সাত জন্মে শোধ দিতে পারব না । তোমাদের নিন্দে করে একটি কথা কইলে মুখ আমার খসে যাবে না, কুষ্ঠ হবে না। আমার জিভে !—বলে আর হাউ হাউ করিয়া কঁাদিয়া শ্যামা ভাসাইয়া দেয় । শ্যামা কি পাগল হইয়া গিয়াছে ? এতদিনে তার আবার সুখের দিন সুরু হইল, এমন সময় মাথাটা গেল তার খারাপ হইয়া ? অনেক বলিয়া বিধান তাহাকে শোয়াইয়া রাখিল, বারবার জিজ্ঞাসা করিল, তোমার কি হয়েছে মা ? --তারপর শ্যামা অসময়ে আজি ঘুমাইয়া পড়িল। অনেকক্ষণ ঘুমাইয়া সে যখন জাগিল আর তাকে অশান্ত মনে হইল না । সে শান্ত নীরব হইয়া রহিল । কত কথা শ্যামার বলিবার ছিল, কত হিসাব কত পরামর্শ কিন্তু এক অসাধারণ নীরবতায় সব চাপা পড়িয়া বুহিল। বিধান বলিল, কলিকাতায় সে বাড়ি ভাড়া করিয়া আসিয়াছে, শ্যামা জিজ্ঞাসাও করিল না কেমন বাড়ি, ক’খানা ঘর, কত ভাড়া । এতকাল এখানে থাকিয়া তার চাকরি হওয়ামাত্ৰ একটা মাসও অপেক্ষা না করিয়া সকলের চলিয়া যাওয়াটা বোধ হয় ভাল